বৃষ্টির মধ্যে সিপিএমের ছাত্র, যুব ও মহিলাদের লালবাজার অভিমুখে মিছিল —নিজস্ব চিত্র।
আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে হওয়া আন্দোলনকে ‘হেনস্থা’ করে দমানো যাবে না, শনিবার লালবাজারের সামনে এই ভাষাতেই হুঁশিয়ারি দিলেন সিপিএমের যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। আর জি করে ভাঙচুরের ঘটনায় ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী-সহ যে ৭ জন বাম নেতা-কর্মীকে পুলিশ সমন পাঠিয়েছিল, তাঁদের নিয়ে এ দিন লালবাজার অভিযান করেছিল ডিওয়াইএফআই, এসএফআই, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। মিছিল রাস্তায় আটকে দেয় পুলিশ। যাঁদের সমন পাঠানো হয়েছিল, তাঁরা ৩০ জন আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে লালবাজারে গিয়ে দেখা করেন।
পুলিশ দুই চিকিৎসককে তলব করায়, চিকিৎসকদের সংগঠন যে ভাবে মিছিল করে লালবাজার গিয়েছিল, কার্যত সেই কায়দাতেই এ দিন দুপুরে ডিওয়াইএফআই, এসএফআই, মহিলা সমিতি কলেজ স্ট্রিটে জমায়েত ও লালবাজার অভিযানের ডাক দেয়। তুমুল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, জমা জল ডিঙিয়ে বাম নেতা-কর্মীরা সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ হয়ে মিছিল করে লালবাজারের দিকে এগোতে থাকেন। লালবাজার অভিমুখী নানা রাস্তা গার্ডরেল দিয়ে আটকে দেয় পুলিশ। বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে ব্যারিকেড দিয়ে মিছিল আটকায় পুলিশ। বাম নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ডাক দেন। সেখানে থেকে লালবাজারে যান মীনাক্ষীরা। মিছিলে ছিলেন পর্বতারোহী পিয়ালি বসাকও। মিছিল থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগেরও দাবি জানান বাম নেতা-কর্মীরা।
মীনাক্ষী-সহ বাম নেতা-কর্মীরা এ দিন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ফের ক্ষোভ উগরে দেন। মীনাক্ষী বলেন, “গত ১৩ বছর ধরে পুলিশ দিয়ে বামপন্থীদের হেনস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু ন্যায়-বিচারের জন্য লড়াই চলবে।” লালবাজার থেকে বেরিয়ে তিনি আরও বলেন, “বলে এসেছি, পারলে দু’দিনের মধ্যে পাঁচটা লালবাজার তৈরি করো। গোটা রাজ্যের প্রতিবাদীরা আসবেন। আমরা বলছি, নোটিস পাঠানো বন্ধ করো। না হলে গোটা রাজ্য থেকে লালবাজার বন্ধ করে দেওয়ার নোটিস আসবে।” সেই সঙ্গে, আর জি করে নির্যাতিতার দেহ আটকানোর মতো ‘অপরাধ’ তাঁরা বার বার করবেন, এমন হুঁশিয়ারিও দেন বামনেত্রী। এসএফআই-এর সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক দীপ্সিতা ধরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ওরা ভাবছে সমন পাঠালে ভয় পেয়ে যাব আমরা। আজ আমরা অল্প কয়েক জন এসেছি। এর পরে হেনস্থা বন্ধ না হলে, লালবাজারে আমরা কাজ করা বন্ধ করে দেব।” আর জি কর-কাণ্ডে পুলিশের বিরুদ্ধে ফের তথ্য-প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগ তোলেন মহিলা সমিতির রাজ্য সভাপতি জাহানারা খানও।
বিচারের দাবিতে রাসবিহারী মোড় থেকে ধর্মতলার গান্ধী মূর্তি পর্যন্ত গাড়ি-মিছিল করেছে সিটু অনুমোদিত কলকাতা অ্যাপ ক্যাব অপারেটর অ্যান্ড ড্রাইভার্স ইউনিয়ন। বক্তৃতা করেন নিখিল মাইতি, শম্পা নন্দী, মহম্মদ মনু, ইন্দ্রজিৎ ঘোষ-সহ সংগঠনের নেতৃত্ব। সম্প্রতি রাজ্য রাতে যত দূর সম্ভব মহিলাদের কাজ না দেওয়ার বিষয়ে যে নির্দেশিকা দিয়েছে, তারও প্রতিবাদ জানান তাঁরা। প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতে চাইছে রাজ্য সরকার, এমন অভিযোগ তুলে রাজ্য মহিলা কংগ্রেস শনিবার ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে দিনভর অবস্থান-বিক্ষোভ করেছে। ছিলেন মহিলা কংগ্রেসের রাজ্য সভানেত্রী সুব্রতা দত্ত, কংগ্রেস নেতা সৌম্য আইচ রায় প্রমুখ।
তবে এই সব প্রতিবাদ-আন্দোলনকে আমল না দিয়ে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, “তৃণমূল কী অন্যায় করেছে যে ভয় পাবে? আর জি করের ঘটনায় দোষীদের কঠোরতম সাজা হোক। মমতা বন্দোপাধ্যায়কে সাধারণ মানুষ নির্বাচিত করেছেন। বিষয়টি আর অরাজনৈতিক নয়। সিপিএম, বিজেপি রাজনৈতিক ভাবে মদত দিচ্ছে (আন্দোলনে)।”