এসএসকেএম হাসপাতালের বার্ন ইউনিট। সোমবার দুপুরে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
সরকারি হাসপাতালে পরিকাঠামো থাকলেও সেটা পর্যাপ্ত নয়। আর বেসরকারি হাসপাতাল হিসেব কষে ‘বাড়তি বোঝা’ নিতে নারাজ! তাই অগ্নিদগ্ধ রোগীদের পরিষেবা পেতে ঘুরতে হয় এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এনআরএস হাসপাতালে আলাদা কোনও বার্ন ইউনিট নেই। অস্ত্রোপচার করেন জেনারেল সার্জারির চিকিৎসকেরা। এর পরে রোগীদের শল্য বিভাগের স্পেশ্যাল ইউনিটে রাখা হয়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং আরজি করে ৪০টি শয্যা বিশিষ্ট বার্ন ইউনিট রয়েছে। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে মাত্র ৬টি শয্যা রয়েছে। দেহ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গেলে সামাল দিতে পারেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হলে এসএসকেএমের উপরে ভরসা করতে হয়।
এসএসকেএম হাসপাতালের ভরসা আবার ৭০টি শয্যার বার্ন ইউনিট থাকা বাঙুর হাসপাতাল। আইসিইউ পরিকাঠামোও সেখানে তুলনায় উন্নত। তাই আশঙ্কাজনক রোগীদের বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে প্রথমেই সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এসএসকেএমের বার্ন ইউনিটে ৩০টি এবং প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে ৬০টি শয্যা রয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় কোনও অগ্নিদগ্ধ রোগী হাসপাতালে পৌঁছলে জরুরি বিভাগে ভর্তি করে তাঁকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। রাজ্যের একমাত্র স্কিন ব্যাঙ্কও রয়েছে সেখানেই। তাই পুড়ে যাওয়া রোগীর চামড়া প্রতিস্থাপনের সুযোগ পিজিতে বেশি। যদিও স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কিন ব্যাঙ্কও কর্মীর অভাবে ধুঁকছে।
সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আরজি করে প্লাস্টিক সার্জারির পরিকাঠামো থাকলেও অস্ত্রোপচারের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়। বাঙুর এবং শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে প্লাস্টিক সার্জারির পরিকাঠামোই নেই। ফলে ওই দু’টি হাসপাতাল স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারছে না। চাপ বাড়ছে এসএসকেএমের উপরে। অভিযোগ, সেখানে পরিকাঠামো থাকলেও পরিষেবা ধারাবাহিক ভাবে পাওয়া যায় না।
এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি হাসপাতালগুলি কেন বিকল্প হয়ে উঠতে পারছে না?
মেডিকা হাসপাতালের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, চিকিৎসক কুণাল সরকার বলেন, ‘‘অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতোই বার্ন ইউনিট চিকিৎসক এবং দক্ষ কর্মীদের নিয়ে তৈরি করতে হয়। জরুরি পরিষেবার মতোই সেখানে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা চালু রাখতে হবে। ১০ শয্যার ইউনিট চালু করলেও যে পরিমাণ পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে, সেটা করার মতো পরিস্থিতি এই মুহূর্তে নেই।’’ অ্যাপোলো হাসপাতালের সিইও রানা দাশগুপ্ত অবশ্য জানান, সেখানে প্লাস্টিক সার্জারির পরিকাঠামো রয়েছে। ২০ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে যাওয়া রোগীর চিকিৎসাও করা হয়। তবে, কেন পৃথক বার্ন ইউনিট নেই, সে প্রশ্নের উত্তর তিনি দেননি। আমরি-র সিইও রূপক বড়ুয়া অবশ্য জানিয়েছেন, অপরিসর জায়গার জেরেই বার্ন ইউনিট তৈরি করা যায়নি। তাঁর কথায়, ‘‘অগ্নিদগ্ধ রোগীকে জরুরি পরিষেবা দেওয়ার পরিকাঠামো রয়েছে। তবে, বার্ন ইউনিট তৈরি করতে যে পরিমাণ জায়গা প্রয়োজন তা নেই।’’
বেসরকারি হাসপাতালের কর্তাদের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, হিসেব কষেই বার্ন ইউনিট তৈরি করতে আগ্রহ দেখানো হচ্ছে না। জরুরি বিভাগের মতোই বার্ন ইউনিটেও যে কেউ ভর্তি হতে পারেন। তাঁর আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হয়েই পরিষেবা শুরু করতে হবে। তার উপরে সব অগ্নিদগ্ধ রোগীর প্লাস্টিক সার্জারির প্রয়োজন হয় না। ওষুধের সাহায্যেই চিকিৎসা চলে। তবে, তাদের চিকিৎসা হয় দীর্ঘমেয়াদি। অগ্নিদগ্ধ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা চালাতে হলে বিপুল পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। ঘরের বায়ুদূষণ রোধ থেকে সংক্রমণ রুখতে নানা দিকে ক়়ড়া নজরদারি চালাতে হবে। তার জন্য যে পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে, প্লাস্টিক সার্জারি না হলে বিশেষ লাভ হবে না। তাই এই চিকিৎসার পরিকাঠামো তৈরি নিয়ে বিশেষ আগ্রহী নয় শহরের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল।
এই পরিস্থিতিতে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের পরিষেবা পাওয়া এখনও এ রাজ্যে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।