পাঠ্যবইয়ে এমন ভুল আগেও হয়েছে। সরকারি স্কুলে এ-রকম ভুল হলে দায়ভার পড়ে সরকারি পাঠ্যক্রম কমিটির উপরে। ওই বইয়ে রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতায় কবির পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, তাঁর জন্ম ‘ইং ১৯৬১ সালের বাংলা ২৫শে বৈশাখ’।
ফাইল চিত্র।
খাস কলকাতার একটি বেসরকারি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবই অনুযায়ী জন্মানোর বছর কুড়ি আগেই মারা গিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! এমনকি ওই বই অনুযায়ী রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জন্মানোর আগেই! এবং যে-বইয়ের জন্য তিনি নোবেল পান, তার বানান ‘গীতাঞ্জলী’! ওই স্কুলের পাঠ্যবইয়ে কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্রের পরিচিতি অংশে তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘কবি’ বলে!
মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রাতর্বিভাগে চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বইয়ে কবিপরিচয় অংশের অন্তত তিন জায়গায় এমন মারাত্মক ভুল নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ওই বইয়ে রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতায় কবির পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, তাঁর জন্ম ‘ইং ১৯৬১ সালের বাংলা ২৫শে বৈশাখ’। ইংরেজি-বাংলা জগাখিচুড়ি ছাড়াও মারাত্মক ভুলটা জন্ম-বছরে। কবির জন্ম ১৮৬১ সালে। তাঁর মৃত্যুর তারিখ হিসেবে ওই বইয়ে লেখা হয়েছে ‘ইং ১৯৪১ সালের বাংলা ২২শে শ্রাবণ’। এখানেও ইংরেজি-বাংলা মিশিয়ে ফেলার অসঙ্গতি। লেখা হয়েছে ‘১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলী’ বইয়ের জন্য নোবেল পুরস্কার পান। ভুল বইটির বানানে।
ওই বেসরকারি স্কুলটি চলে মিত্র ইনস্টিটিউশনের ভবানীপুর শাখার ভবনেই। কিছু অভিভাবক জানান, এই ভুলটা প্রথমে চোখে পড়ে তাঁদের। স্কুলপাঠ্য বইয়ে এমন মারাত্মক ভুল কী ভাবে লেখা ও ছাপা হয়ে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকেরা। বইটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বদলানোর আবেদনও জানিয়েছেন তাঁরা।
এমন সব ভুল স্কুল-কর্তৃপক্ষের চোখে পড়ল না কেন? স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অপর্ণা চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ভুলটা তাঁদেরও চোখে পড়েছে। তাঁরা যখন রবীন্দ্রনাথের কবিপরিচয় পড়ান, তখন তা শুদ্ধ করেই পড়ান। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এ-রকম ভুল তথ্য সংবলিত বইকে তাঁরা নির্বাচন করলেন কী ভাবে? অপর্ণাদেবী বলেন, ‘‘করোনার জন্য দু’বছর স্কুল বন্ধ ছিল। এ বার আমরা এমন নতুন পাঠ্যবই নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম, যা দেখে পড়ুয়ারা পড়তে উৎসাহ পায়। ওই বাংলা বইও স্কুলের সকলের সিদ্ধান্ত অনুসারেই নির্বাচিত হয়েছিল।’’ অপর্ণাদেবীর কথায়, ‘‘প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির এত পাঠ্যবই নির্বাচনের মাঝখানে এই ভুল চোখ এড়িয়ে গিয়েছে। তবে আমরা এই বই দ্রুতই পাল্টে দেব।’’
পাঠ্যবইয়ে এমন ভুল আগেও হয়েছে। সরকারি স্কুলে এ-রকম ভুল হলে দায়ভার পড়ে সরকারি পাঠ্যক্রম কমিটির উপরে। বেসরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে বই নির্বাচনের দায় কিন্তু স্কুল-কর্তৃপক্ষেরই। ভুল তথ্যের পাঠ্যবই পড়তে হলে খুদেদের উপরে প্রভাব পড়ে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
রাজ্য পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, ‘‘যিনি বই লিখেছেন, যাঁরা ছেপেছেন এবং যে-স্কুলের কর্তৃপক্ষ বই নির্বাচন করেছেন, এই ভুলের জন্য তাঁরা সবাই দোষী। এমন ভুল জাতিগত লজ্জা।’’ অভীকবাবুর বক্তব্য, বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকদের উচিত, খুঁটিয়ে পড়ে বই নির্বাচন করা। ছোট ছোট পড়ুয়া কিন্তু ছাপার অক্ষরকে খুব বিশ্বাস করে। এমন ভুল ছাপার অক্ষরে দেখলে তা তাদের মনে গেঁথে যেতে পারে।