রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ
অগস্টে চালু হওয়া রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে অনুযোগ ছিলই। মেডিক্যাল পড়ুয়াদের অভিভাবকদের উদ্দেশে ওই কলেজের অধ্যক্ষার ‘পরামর্শ’ তাতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করল। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকদের একটি চিঠি দিয়েছেন অধ্যক্ষা। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে নতুন মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের পরিকাঠামো এবং সংলগ্ন এলাকার পরিবেশ ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
বীরভূমের এই প্রথম মেডিক্যাল কলেজে পঠনপাঠন সবে শুরু হয়েছে। প্রথম বর্ষে ১০০টি অনুমোদিত আসনে রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্সের পাশাপাশি সর্বভারতী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পড়ুয়ারাও ভর্তি হয়েছেন। কলেজের ছাত্রাবাস, ছাত্রী-নিবাস, শিক্ষক-কর্মীদের আবাসন হাসপাতাল ও অ্যাকাডেমিক ভবন থেকে সাত কিলোমিটার দূরে, চকমণ্ডলা গ্রামে। সুনসান রাস্তা। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের একাংশ। ছাত্রাবাস ও ছাত্রী-নিবাসে যাতায়াতের রাস্তার সংস্কার এবং ওই পথে বাস চালু করার জন্য আলোচনা হয়েছিল।
অধ্যক্ষা শিখা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সই সংবলিত চিঠিতে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিকাঠামো গড়ার কাজ এখনও শেষ হয়নি। এই অবস্থায় ছেলেমেয়েরা যাতে ‘অহেতুক ঝুঁকি’ না-নেন, তা দেখার দায়িত্ব অভিভাবকদেরই। এ কথা তিনি কেন লিখছেন, তা-ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে চিঠিতে। অধ্যক্ষার বক্তব্য, চকমণ্ডলা গ্রামে হস্টেলে যাতায়াতের জন্য কলেজের একটি বাস আছে। কিন্তু পড়ুয়াদের একাংশ বাসের পরিবর্তে টোটোয় চড়ে হস্টেলে ফিরছেন। সূর্যাস্তের পরেও এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। চিঠিতে অধ্যক্ষা লিখেছেন, ‘রাস্তার অবস্থা, আশপাশের এলাকা সম্পর্কে আপনারা অবহিত...। আপনাদের সন্তানেরা অহেতুক ঝুঁকি নিচ্ছেন। পড়ুয়ারা আইনশৃঙ্খলা বা নিরাপত্তা জনিত কোনও সমস্যায় পড়লে কর্তৃপক্ষ কোনও ভাবে দায়ী থাকবে না।’ ডাক্তারির ছাত্রীদের বাবা-মাকে বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেছেন অধ্যক্ষা।
কলেজ কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ২৪ ডিসেম্বর অধ্যক্ষার চিঠিটি ডাক মারফত অভিভাবকদের পাঠানো হয়েছে। এক অভিভাবক বলেন, ‘‘অধ্যক্ষা নিজেই আশপাশের এলাকার পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বলা হচ্ছে, নিরাপত্তাও পর্যাপ্ত নয়। আমরা এর কী অর্থ করব?’’ অন্য এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘চকমণ্ডল গ্রামে একটি খাতার দোকান পর্যন্ত নেই। বিকেলে কলেজের যে-বাস ছাড়ে, তাতে ১০০ জন ছাত্রছাত্রী ওঠার জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে অনেকে টোটোয় হস্টেলে ফেরে।’’
মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের একাংশের বক্তব্য, দুমকা রোড থেকে হস্টেল পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তা একেবারে মাঠের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। সেই রাস্তা একেবারে সুনসান। লোকজনের যাতায়াত নেই বললেই চলে। প্রশাসনিক স্তর থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, ওই রুটে বাস চালানো হবে। সেই পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
আর অধ্যক্ষা শিখাদেবী বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ভবন দ্রুত নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা করবে। প্রয়োজন হলে যে-বাস আছে, তা আরও এক বার যাতায়াত করবে। আশপাশের এলাকা খারাপ নয়। ধীরে ধীরে সব সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। অরক্ষিত এলাকা দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের অনেকটা পথ যেতে হয়। ওদের কম বয়স। বুঝতে চাইবে না। তাই অভিভাবকদের সহযোগিতা পাওয়ার আশায় সতর্ক করে দিলাম।’’