—প্রতীকী ছবি।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তেমন বড় কোনও কিছুর ঘোষণা নেই। ২০২৪-’২৫ আর্থিক বর্ষের পূর্ণাঙ্গ বাজেটে শুধু ক্যানসারের তিনটি ওষুধের উপর থেকে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে বহুমূল্য ওই ওষুধগুলির দাম কিছুটা হলেও কমবে বলেই মত চিকিৎসক মহলের। কিন্তু, যেখানে খরচের জন্য বহু রোগী ক্যানসারের চিকিৎসা শেষ করতে পারেন না, সেখানে শুধু তিনটি ওষুধকেই বেছে নেওয়া হল কেন, তা নিয়েও প্রশ্নথেকে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, ‘ট্রাস্টুজ়ুমাব ডিরাক্সটেকান’, ‘ওসিমেরটিনিব’ এবং ‘ডুরভ্যালুমাব’ এই তিন ওষুধের উপর থেকে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ক্যানসার চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওই তিনটি ওষুধের ক্ষেত্রেই মাসে অন্তত দেড় লক্ষ টাকা করে খরচ হয় এক-এক জন রোগীর। আমদানি শুল্ক উঠে যাওয়ায় কিছুটা দাম কমারআশা দেখা গেলেও, সেটির বাস্তবায়ন কবে হবে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। কারণ, গত ফেব্রুয়ারিতে ‘ভোট-অন অ্যাকাউন্ট’ বাজেটে জরায়ু-মুখের ক্যানসার প্রতিরোধে ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সের মেয়েদের প্রতিষেধক দেওয়ার কথা ঘোষণা হয়েছিল। এখনও তার বাস্তবায়ন হয়নি। এ দিনও ওই প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে কোনও কথা বাজেটে বলা হয়নি।
ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দাম কমানোর ব্যবস্থাকে স্বাগত। কিন্তু নির্দিষ্ট একটি বহুজাতিক সংস্থার ওই তিনটি ওষুধকে বেছে নেওয়াটাও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। তেমনই, ঘোষণার বাস্তবায়ন কবে হবে সেটাও কিন্তু বড় প্রশ্ন।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, স্তন, পাকস্থলী, গলব্লাডার এবং শরীরের অন্যান্য ক্যানসারে ‘এইচইআর-২’ জিনের মিউটেশনের উপস্থিতি মিললে, প্রতি মাসে ‘ট্রাস্টুজ়ুমাব ডিরাক্সটেকান’ ইঞ্জেকশনটি নিতে হয়। ফুসফুসের ক্যানসারের ক্ষেত্রে ‘ইজিএফআর’ জিন পজ়িটিভ থাকলে ক্যানসারে আক্রান্তদের ইমিউনোথেরাপি হিসেবে ‘ডুরভ্যালুমাব’ ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা হয়, যাতে রোগটি পুনরায় ফিরেনা আসে।
ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমাদের রাজ্যে পুরুষদের ক্ষেত্রে ফুসফুস এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ। সেই প্রেক্ষিতে ওই ওষুধগুলির দাম কিছুটা কমলে, অনেক রোগীর উপকার হবে।কারণ অনেকের পক্ষেই একটা সময়ের পরে আর লক্ষাধিক টাকা খরচ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু ঘোষণার বাস্তবায়ন কবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি।’’ আমদানি শুল্ক উঠলেও, ওষুধের উপর জিএসটি প্রত্যাহার না হওয়ায় দাম ঠিক কতটা কমবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে চিকিৎসকেদের। ক্যানসার শল্য চিকিৎসক সৌরভ দত্তের প্রশ্ন, ‘‘ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অধিকাংশ ওষুধ ও প্রযুক্তিই অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ। সেখানে দাঁড়িয়ে ক্যানসারের চিকিৎসাকে সাধারণের আয়ত্তের মধ্যে আনতে হলে, শুধু ওই তিনটি ওষুধই বাছা হল কেন?’’