Partha Chatterjee

জেলের মধ্যে বায়না পার্থের, স্নানের সময় ড্রাম থেকে জল তুলে গায়ে ঢেলে দেওয়ার লোক চাই!

এত দিন পার্থ নিজেই মগ দিয়ে তাঁর সেলের সামনে বড় প্লাস্টিকের ড্রামের জল তুলে স্নান করতেন। এখন তাঁর দাবি, স্নানের সময় লোক দিতে হবে, যিনি ড্রাম থেকে জল তুলে তাঁর গায়ে ঢেলে দেবেন।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২২ ০৫:৪৬
Share:

পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

প্রেসিডেন্সি জেলের নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে তিন দিন দুপুরে বন্দিদের আমিষ পদ দেওয়া হয়। মাছ হলে প্রত্যেক বন্দি পান দু’টুকরো। মাংস হলে চার টুকরো। কিন্তু জেল সূত্রের খবর, তাঁকে চার টুকরো মাছ এবং মাংস হলে ছ’টুকরো দিতে হবে বলে বায়না করছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, অন্য বন্দিদের থেকে তাঁকে সব সময় বেশি দিতে হবে।

Advertisement

খাবারের মতো স্নানের ক্ষেত্রেও পার্থের আবদারে তাঁরা নাজেহাল বলে কারারক্ষীদের একাংশের অভিযোগ। নিরাপত্তার কারণে ‘পহেলা বাইশ’ ওয়ার্ডে পার্থের দু’নম্বর সেলের সামনে বড় প্লাস্টিকের ড্রামে জল রাখা থাকে। এত দিন তিনি নিজেই মগ দিয়ে সেই ড্রামের জল তুলে স্নান করতেন। এখন তাঁর দাবি, স্নানের সময় লোক দিতে হবে, যিনি ড্রাম থেকে জল তুলে তাঁর গায়ে ঢেলে দেবেন। জেল-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এটা সম্ভব নয়। কারণ, এই ধরনের কোনও আইন বা বিধি নেই। পার্থ অসুস্থ নন। শারীরিক ভাবে তিনি সক্ষম। সে-ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। কিন্তু পার্থ নাছোড়!

এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ এ ভাবেই স্নান থেকে খাবার পর্যন্ত সব বিষয়ে নানা বায়নায় কারাকর্মীদের তটস্থ করে রাখছেন বলে জেল সূত্রের খবর। তাঁর ‘অন্যায্য’ কার্যকলাপে কারা-কর্তৃপক্ষ থেকে কারারক্ষী সকলেই অসন্তুষ্ট। কারণ, খারিজ করে দেওয়ার পরেও তিনি একই আবদার-আবেদন করে চলেছেন বলে অভিযোগ। স্নান, খাবারদাবারের সঙ্গে ইদানীং যুক্ত হয়েছে ফোন নিয়ে বায়না।

Advertisement

জেলের ফোন থেকে প্রত্যেক বন্দি যে-কোনও তিনটি নম্বরে দশ মিনিট কথা বলতে পারেন। পার্থ দু’টি নম্বর জেল-কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন। একটি তাঁর আইনজীবীর, অন্যটি তাঁর এক আত্মীয়ের। কারারক্ষীদের অভিযোগ, তাঁর ফোনের সময় কোনও রক্ষীর ধারেকাছে থাকা চলবে না, তাঁর সেলের সামনে সর্বক্ষণ রক্ষী রাখা যাবে না বলে দাবি তুলেছেন পার্থ। ওই বিচারাধীন বন্দির ‘হুকুম’, তাঁর অনুমতি ছাড়া রক্ষীরা যেন সেলের সামনে না-আসেন। কারারক্ষীদের বক্তব্য, এর কোনওটাই সম্ভব নয়। আদালতের নির্দেশে পার্থের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়েছে।

শুধু ‘অন্যায়’ আবদার নয়, পার্থের ‘হুকুমদারি’ নিয়েও অভিযোগ তুলছেন কিছু কারারক্ষী। তাঁরা জানাচ্ছেন, পার্থ নিজেকে এখনও ভিআইপি ভাবছেন, মন্ত্রী ভাবছেন। সব কিছু সুযোগ-সুবিধা তাঁর প্রাপ্য বলে মনে করছেন।

কারাকর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, পার্থের কোনও অন্যায্য আবদারই শোনা হচ্ছে না। নিয়ম মেনে সব বন্দিকে একই মেনুর খাবার দেওয়া হয়। তবে পার্থ রোজই নিজের টাকা দিয়ে ক্যান্টিন থেকে খাবার আনিয়ে খাচ্ছেন। সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর সেলের সামনে গিয়ে ক্যান্টিনের তরফে খাবার বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে পার্থের আইনজীবী ও আত্মীয়েরা টাকা জমা দিচ্ছেন। তা দিয়ে পার্থ খাবারের দাম মেটাচ্ছেন। তবে চিকিৎসকদের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর খাবারদাবারের দিকে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে।

পার্থের উপরে শুধু কারারক্ষীরাই বিরূপ নন। নিয়োগ-দুর্নীতিতে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের মামলায় পার্থের একদা ঘনিষ্ঠ পলাশিপাড়ার বিধায়ক তথা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যও এখন তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। যদিও একই ওয়ার্ডের সাত নম্বর সেলে থাকেন তিনি। কারারক্ষীরা জানান, প্রথম দিন জেলে ঢোকার পরেই পার্থের সেলে উঁকি দিয়ে ‘পার্থদা’ বলে ডাক দিয়েছিলেন মানিক‌। সে-দিন তাঁর ডাকে সাড়া দেননি পার্থ। পরের দিন সকালেই জেলবন্দি শান্তিপ্রসাদ সিংহ, অশোক সাহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় ও সুবীরেশ ভট্টাচার্যের সঙ্গে জেল-চত্বরে অনেক ক্ষণ গল্পগুজব হয় মানিকের। তার পর থেকেই পার্থকে এড়িয়ে চলেছেন মানিক। শান্তিপ্রসাদেরা রয়েছেন পহেলা বাইশ ওয়ার্ডের পাশের ওয়ার্ড ‘তেইশ-চুয়াল্লিশে’। মাঝেমধ্যেই মানিকের সঙ্গে তাঁদের আড্ডা হয়। তাঁদের সকলকেই জেল সুপারের অফিস, ক্যান্টিন বা জেল হাসপাতালে যেতে হলে পার্থের সেলের সামনে দিয়েই যেতে হয়। মানিককে দেখে সেলের ভিতর থেকে পার্থ বেশ কয়েক বার ‘মানিক মানিক’ বলে ডাক দিয়েছেন। কিন্তু মানিক ঘুরেও তাকাননি বলে জানান কর্তব্যরত কারারক্ষীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement