ফাইল চিত্র।
শিক্ষা শিবির থেকে রাজনৈতিক মহল— সর্বত্র চলছে জোরদার বিতর্ক। তার মধ্যেই শুরু হয়ে গেল স্কুলপড়ুয়াদের নীল-সাদা পোশাক তৈরির প্রস্তুতি। রাজ্যের শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, কোন স্কুলের পোশাক কারা বানাবে, তার তালিকা তৈরির কাজ প্রায় সম্পূর্ণ। দু’-এক দিনের মধ্যেই সেই তালিকা স্কুলগুলিতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে ডেকে নেওয়া হবে তাদের পোশাকের মাপ।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ২ এপ্রিল। সেই জন্য বেশির ভাগ স্কুল ছুটি থাকবে। তাই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হলেই পোশাকের মাপ নেওয়ার কাজ শুরু হবে বলে জানান শিক্ষা দফতরের এক কর্তা।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত রাজ্যের সব সরকারি, সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে নীল-সাদা পোশাক চালু করার সিদ্ধান্তে আপত্তি তুলেছেন অনেক প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাঁদের বক্তব্য, সব স্কুলের পোশাক অভিন্ন রঙের (নীল-সাদা) হয়ে গেলে বিভিন্ন স্কুল নিজস্বতা ও ঐতিহ্য হারাবে। স্কুলপোশাকে সরকারের বিশ্ব বাংলা লোগো থাকবে কেন, সেই প্রশ্ন তুলেও আপত্তি জোরদার করেছেন প্রধান শিক্ষকদের একাংশ। দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘মন থেকে মেনে নিতে পারছি না। কিন্তু সরকারি স্কুলে পড়িয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত মানতেই হবে।’’
তবে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের পোশাকের রংও নীল-সাদা হবে কি না, সেই বিষয়ে এখনও কিছু জানায়নি শিক্ষা দফতর। নবম থেকে দ্বাদশের পোশাক সরকার দেয় না। তাই ওই চার শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পোশাকের রং যা আছে, তাঁরা সেটাই রাখতে চান বলে জানিয়েছেন অধিকাংশ শিক্ষক। মিত্র ইনস্টিটিউশন ভবানীপুর শাখার প্রধান শিক্ষক রাজা দে জানান, শিক্ষা দফতর এখনও পর্যন্ত নবম থেকে দ্বাদশের পোশাকের রংয়ের ব্যাপারে কিছু বলেনি। তাই দীর্ঘকাল ধরে যে-রং চলছে, সেটাই রাখতে চান তাঁরা। কিন্তু সে-ক্ষেত্রে একই স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের
পোশাকের রং দু’রকম হয়ে যাবে না কি? ওই প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘স্কুলপোশাকের রংয়ে ঐতিহ্য বজায় রাখতে গেলে এ ছাড়া আর তো কোনও উপায় থাকছে না। নবম থেকে দ্বাদশের পোশাক আগের মতোই থাকবে।’’ যোধপুর পার্ক বয়েজ়ের প্রধান শিক্ষক অমিত
সেন মজুমদারও জানান, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের পোশাকের রং নিয়ে শিক্ষা দফতর আলাদা নির্দেশ দেয়নি। তাই তাঁরাও নবম থেকে দ্বাদশের পোশাকে আগের রংই ব্যবহার করবেন।
সব স্কুলের পোশাকের রং নীল-সাদা করে রাজনীতি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ নিখিল বঙ্গ
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইনের। তিনি
বলেন, ‘‘অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সরকার স্কুলপোশাক দিচ্ছে বলে পোশাকের রং জোর করে চাপিয়ে দেবে? স্কুলের নিজস্বতা বলে কিছু থাকবে না? এই নীল-সাদা পোশাক স্কুলে আসার
আগে আমরা রাস্তায় নেমে এর বিরোধিতা করব।’’