বৈঠকের আগে মমতা-চন্দ্রবাবু।
গণতন্ত্র বাঁচাতে এবং দেশকে বাঁচাতে একজোট হয়ে লড়াই— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের বৈঠক সেরে বললেন চন্দ্রবাবু নায়ডু। পিছিয়ে গেল ২২ নভেম্বরের প্রস্তাবিত বৈঠকও। তৃণমূল এবং তেলুগু দেশমের দুই শীর্ষনেতা নবান্নে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দিলেন, সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে দিল্লিতে ওই বৈঠক হবে।
কংগ্রেস তো বটেই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অনেক দিন ধরেই অত্যন্ত সক্রিয় জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে। অখিলেশ যাদব, অরবিন্দ কেজরীবাল, উদ্ধব ঠাকরেরা বিভিন্ন সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়াও দিয়েছেন। কিন্তু বিরোধী দলগুলিকে এক মঞ্চে আনার বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছে বরাবর মমতাকেই। সম্প্রতি চন্দ্রবাবু নায়ডুও সক্রিয় হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতোই। ইতিমধ্যেই তিনি বৈঠক করেছেন জেডিএস প্রধান এইচ ডি দেবগৌড়া এবং তাঁর ছেলে তথা কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীর সঙ্গে। এ বার কলকাতায় এসে তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বৈঠক করে গেলেন তিনি।
সোমবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ নবান্নে পৌঁছন চন্দ্রবাবু। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই তাঁকে স্বাগত জানান। সঙ্গে ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ব্রাত্য বসুও। মুখ্যমন্ত্রী চেম্বারেই চন্দ্রবাবু ও তাঁর সঙ্গে আসা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মমতার বৈঠক হয়। জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধী সমীকরণ আরও জোরদার করার কৌশল নিয়েই মূলত কথা হয়েছে বলে খবর। তবে সে সম্পর্কে বিশদ মন্তব্য মমতা বা চন্দ্রবাবু করেননি।
আরও পড়ুন, বিজেপি নেতাদের উপর হামলার জের, রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ-অবরোধ-মিছিল
বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রীর চেম্বার থেকে নীচে নেমে এসে চন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতায় একজোট হওয়ার সময় এসেছে। দেশে গণতন্ত্র বিপন্ন। সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে।’’ সিবিআই, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থার টানাপড়েনের কথা উল্লেখ করেন চন্দ্রবাবু। তিনি বলেন, ‘‘গণতন্ত্র বাঁচাতে, দেশকে বাঁচাতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে আমরা একসঙ্গে লড়ব।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ার কথাই বলেন। কিন্তু বিরোধী জোটের মুখ কে হবেন? মমতা জানান, এই জোটের মুখ সবাই।
আরও পড়ুন, কয়েক কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী! সুপ্রিম কোর্টে বিস্ফোরক সিবিআই অফিসার
নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা আগেই এ দিন নবান্নে ঢুকেছিলেন চন্দ্রবাবু নায়ডু। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ নবান্নে পৌঁছনোর কথা ছিল তাঁর। প্রথমে মোদী সরকারের শরিক ছিল চন্দ্রবাবুর দল তেলুগু দেশম পার্টি। কিন্তু চলতি বছরেই তিনি এনডিএ ছাড়েন। লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই আরও বেশি করে সঙ্ঘাতের পথে যাচ্ছেন তেলুগু দেশম সুপ্রিমো। চন্দ্রবাবু নায়ডুর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ সুসম্পর্ক। দু’জনের দলই অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের শরিক ছিল। এ বার মমতা এবং চন্দ্রবাবু ফের এক মঞ্চে আসছেন এনডিএ বিরোধী জোটের অন্যতম প্রধান দুই উদ্যোক্তা হিসেবে। আগামী ১৯ জানুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সমাবেশের ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির বিরোধী শিবিরে থাকা প্রায় সব দলকে তিনি ইতিমধ্যেই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। চন্দ্রবাবুর দলও আমন্ত্রণ পেয়ে গিয়েছে।
(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার খবর এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলায় খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)