প্রসূন দে-কে ট্যাংরার অটল শূর রোডের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে বুধবার দুপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
ট্যাংরাকাণ্ডে ধৃত প্রসূন দে-কে অটল শূর রোডের বাড়িতে নিয়ে এসেছিল পুলিশ। ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে। প্রসূন আগেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে, তিনি নিজের ১৪ বছরের কন্যা প্রিয়ম্বদা, স্ত্রী রোমি দে এবং বৌদি সুদেষ্ণা দে-কে খুন করেছেন। তাঁর নিজেরও বেঁচে থাকার ইচ্ছা নেই বলে দাবি করেছেন। তিনি এখনও পর্যন্ত পুলিশের কাছে যা যা বলেছেন, তার সব ঠিকঠাক কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার পুনর্নির্মাণ থেকে এই সংক্রান্ত তথ্য মিলতে পারে।
সোমবার রাতে প্রসূনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর দাদা প্রণয় দে এবং প্রণয়ের কিশোর পুত্র প্রতীপ এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রতীপ জানিয়েছে, কাকা তাকেও খুন করার চেষ্টা করেছিলেন। মঙ্গলবার প্রসূনকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। ৬ মার্চ পর্যন্ত তাঁকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার দুপুর ২টোর পর প্রসূনকে নিয়ে আসা হয় ট্যাংরায়।
পুলিশি জেরার মুখে প্রসূন দাবি করেছেন, তিনি মেয়ে প্রিয়ম্বদাকে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেছেন। সেই সময়ে তাঁর স্ত্রী রোমি মেয়ের পা চেপে ধরেছিলেন। এ ছাড়া, প্রিয়ম্বদাকে খাওয়ানো হয়েছিল ঘুমের ওষুধ মেশানো পায়েসও। প্রিয়ম্বদার মৃত্যুর পর স্ত্রী এবং বৌদিকে তিনি খুন করেন।
প্রসূনের দাবি অনুযায়ী, রোমি প্রথমে নিজের হাত কেটেছিলেন। তাতে ‘কার্যসিদ্ধি’ না হওয়ায় প্রসূন গিয়ে রোমির হাত আর গলা কেটেছিলেন। সেই সময় তাঁর চিৎকার যাতে বাইরে না পৌঁছোয়, সে জন্য রোমির মুখেও বালিশ চাপা দিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সুদেষ্ণা তাঁর ঘরে এসে রোমির এই অবস্থা দেখেন। এর পরে বৌদি সুদেষ্ণাকেও একই ভাবে তিনি খুন করেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন প্রসূন। কোন সময়ে কাকে খুন করা হয়েছিল, কী ভাবে খুন করা হয়েছিল, প্রসূনের বয়ান যাচাই করে দেখতে চান তদন্তকারীরা। সেই কারণেই বুধবার তাঁকে বাড়িতে, মূল ঘটনাস্থলে নিয়ে আসা হল।
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে , প্রসূন দাবি করেছেন, তিন জনকে খুনের পরে প্রসূন উপরের তলা থেকে কিশোর প্রতীপকে নিয়ে আসেন প্রিয়ম্বদার ঘরে । ওই ঘরেই প্রতীপের হাত কাটা হয় বলে তাঁর দাবি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এর পরে প্রসূন নিজের হাত কেটে ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলের দিকে তিনি ঘুম থেকে ওঠেন। তার পরে সেই রাতে প্রণয় এবং প্রতীপের সঙ্গে গাড়িতে চেপে প্রসূন বেরিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ি থেকে। ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টের পরে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে একটি স্তম্ভে ধাক্কা দিয়েছিল তাঁদের গাড়ি। প্রণয় এবং প্রসূন দাবি করেছিলেন, আত্মহত্যা করার জন্যই ওই পদক্ষেপ করেছিলেন তাঁরা। প্রণয়ের বয়ানও খতিয়ে দেখতে চায় পুলিশ। তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হতে পারে। তার পর এই তিন খুনে তাঁর ভূমিকাও যাচাই করা হবে।