মমতাকে ধন্যবাদ প্রদীপের, নিন্দায় অধীর-মান্নানরা

রাজ্য জুড়ে শাসক দলের দাপটে এমনিতেই বিধ্বস্ত অবস্থা কংগ্রেসের। উপরি বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে রাহুল গাঁধীর পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে আরও ধন্দে পড়ে গেলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৭
Share:

রাজ্য জুড়ে শাসক দলের দাপটে এমনিতেই বিধ্বস্ত অবস্থা কংগ্রেসের। উপরি বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে রাহুল গাঁধীর পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে আরও ধন্দে পড়ে গেলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। এর পর মমতাকে কি তাঁদের ধন্যবাদ জানানো উচিত, নাকি এখনও তাঁকে বিজেপি-র বন্ধু বলে আক্রমণ চালিয়ে যাবেন

Advertisement

তাঁরা? কার্যত এ বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস এখন দ্বিধাবিভক্ত।

রাহুলকে আটকের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তৃণমূলনেত্রী যে বিবৃতি দিয়েছেন, তার জন্য মমতাকে বৃহস্পতিবার ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। তৃণমূলনেত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, যুব কংগ্রেস সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্যও। কিন্তু উল্টো পথে হেঁটে মমতার বিরুদ্ধে এ দিনও সমালোচনা চালিয়ে গিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান।

Advertisement

সম্প্রতি যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পথ দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর মমতাকে ফোন করেছিলেন রাহুল গাঁধী। বুধবার দিল্লিতে প্রাক্তন সেনা কর্মীর আত্মহত্যার পরে রাহুল তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে পুলিশ তাঁকে দু’বার আটক করে। পুলিশ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেন মমতা। বুধবারের ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের একাংশের ধারণা, আগামী দিনে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কের আরও উন্নতি ঘটতে পারে। কারণ, রাজ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। তা মাথায় রেখেই লোকসভা ভোটের আগে ক্রমশ বিজেপি-বিরোধী সুর চড়াবেন মমতা। সেই সঙ্গে জাতীয় স্তরে ধর্মনিরপেক্ষ জোটের সঙ্গে থাকতে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার পথেও হাঁটতে পারেন তিনি।

রাহুলকে আটক করার প্রতিবাদে এ দিন শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস। প্রদীপবাবু দক্ষিণ কলকাতার ট্রাঙ্গুলার পার্কের কাছে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন। অরিন্দমের নেতৃত্বে যুব কংগ্রেস বিক্ষোভ দেখায় রাজ্য বিজেপি-র সদর দফতরের সামনে। পরে প্রদীপবাবু এবং অরিন্দম উভয়েই বলেন,‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে রাহুলের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাতে ওনাকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়।’’

কিন্তু সে পথে হাঁটতে চাননি অধীর-মান্নান। বরং তাঁদের উভয়েরই মতে, মমতা ‘বিপদে’ পড়ে এখন বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। অধীরবাবুর কথায়,‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই বাংলায় বিজেপি-র লম্ফঝম্ফ বেড়েছে। কিন্তু মমতা এখন টের পাচ্ছেন এই বন্ধুত্বের জন্য সংখ্যালঘু মানুষ ওঁকে আর বিশ্বাস করছেন না।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘দিদি জানেন, দেশ থেকে বিজেপি ভুত তাড়ানোর একমাত্র ওঝা কংগ্রেস। তাই বিজেপি ভুতকে বোতলে ঢোকানোর পাশাপাশি সংখ্যালঘু মানুষের মন পেতে মমতা এখন কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মওকা বুঝে ফের মোদীর দিকে ঝুঁকতে ওঁর সময় লাগবে না।’’একই মত মান্নানেরও। তাঁর মতে,‘‘নীতি, আদর্শ, দেশপ্রেমের কথা ভেবে মমতা কোনও দিন সিদ্ধান্ত নেননি। সব সময়ে নিজের স্বার্থ দেখেছেন। এখনও তাই।’’

তবে রাজনৈতির পর্যবেক্ষকদের মতে, অধীর-মান্নানদের এ কথা বলা ছাড়া উপায় নেই। কারণ খাতায়কলমে বাংলায় প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। তবে এ-ও ঠিক, পরবর্তীতে দলীয় হাইকম্যান্ড তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার সিদ্ধান্ত নিলে তাঁদের সেই সিদ্ধান্তও মেনে নিতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement