নগদে টান, সঙ্কটের মেঘ আলু সংরক্ষণে

নোট বাতিলের প্রভাব পড়েছিল আলু চাষে। সঙ্কটের সেই দীর্ঘ ছায়া এ বার হিমঘরে আলু সংরক্ষণের পথও আগলে রাখছে।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০৮
Share:

নোট বাতিলের প্রভাব পড়েছিল আলু চাষে। সঙ্কটের সেই দীর্ঘ ছায়া এ বার হিমঘরে আলু সংরক্ষণের পথও আগলে রাখছে। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে হিমঘরে আলু রাখা শুরু হয়ে যায়। এ তদিন হিমঘর মালিকদের থেকে নগদে ঋণ নিয়ে চাষি, ছোট ব্যবসায়ীরা আলু রাখতেন। এ বার সেই লেনদেন কী ভাবে হবে— সেই প্রশ্নই বাড়াচ্ছে উদ্বেগ।

Advertisement

সমস্যা সমাধানে জেলায় জেলায় হিমঘর মালিকদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। আধিকারিকদের নিদান, চাষিদের অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। তা হলে ব্যাঙ্ক থেকেই সহজে ঋণ পাওয়া যাবে। স্টেট ব্যাঙ্কের মেদিনীপুরের রিজিওনাল ম্যানেজার জি কে ওয়াধা-র কথায়, “বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছাড়া লেনদেন সম্ভব নয়। শিবির করে অ্যাকাউন্ট খোলার দায়িত্ব আমাদের।”

হিমঘর মালিকরা অবশ্য মনে করছেন, এত সহজে সমস্যা মিটবে না। কারণ, গ্রামীণ এলাকায় বহু কৃষক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তেমন সড়গড় নন। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য নেতা লালু মুখোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা বছরের পর বছর নগদে লেনদেনই অভ্যস্ত। হঠাৎ করে পুরনো পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন হলে চাষি সমস্যায় পড়বে।’’ সমস্যা সমাধানে সম্প্রতি এক বৈঠকও হয়েছে। হিমঘর মালিক সংগঠনের রাজ্য নেতা পতিতপাবন দে-র বক্তব্য, ‘‘স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির সঙ্গে সেই বৈঠকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পাশাপাশি কৃষি, কৃষি বিপণন, পরিবহণ— সব দফতরের প্রতিনিধিরা ছিলেন। একটি রিভিউ কমিটি গড়া হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবে কমিটি।’’

Advertisement

রাজ্যের আলু উৎপাদক প্রধান তিন জেলা হুগলি, বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুর— সর্বত্র পরিস্থিতি একই। হুগলিতে হিমঘরে রয়েছে সর্বাধিক, ১৪২টি। সেখানে ২২-২৫ লক্ষ টন আলু রাখা হয়। বর্ধমানে একশোর উপর হিমঘরে ২১ লক্ষ টন আলু মজুত হয়। আর পশ্চিম মেদিনীপুরে ৭৮টি হিমঘরে ৬ লক্ষ টন আলু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। দাম কম থাকলে হিমঘরে আলু রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ সমস্যা হয় না। কিন্তু খোলাবাজারে আলুর দাম বেশি হলে চাষিরা হিমঘর কর্তৃপক্ষের থেকে ঋণ নেন। আর মজুত আলুর পরিমাণের ভিত্তিতে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেন হিমঘর মালিকরা। এই বৃত্তেই আলুর বাজার নিয়ন্ত্রিত হয়।

বর্ধমানের হিমঘর মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আলুর মরসুমে হিমঘরগুলির মাধ্যমে ৩-৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয় চাষি ও ছোট ব্যবসায়ীদের। নগদ-সঙ্কটে এই ঋণের জোগান কোত্থেকে আসবে, প্রশ্ন সেখানেই। হিমঘর অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য দিলীপ প্রতিহার জানালেন, গতবার ট্রাক প্রতি আলুর দাম ছিল ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। নিয়মমাফিক, ট্রাক প্রতি ৪০-৪২ হাজার টাকা ঋণ দেওয়ার কথা। দাম বেশি হওয়ায় বাধ্য হয়ে লরি প্রতি ৬৫-৭০ হাজার টাকা ঋণ দিতে হয়েছিল। তাই দিলীপবাবুর প্রশ্ন, ‘‘চাষিরা ব্যাঙ্ক মারফত লেনদেন করলে বাড়তি টাকা কোথায় পাবেন?”

ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সাফ কথা, সরকারি নিয়মের বাইরে তাঁরা হাঁটতে পারবেন না। তা ছাড়া, একশো দিনের কাজ থেকে নানা সরকারি প্রকল্পে বহু গরিব মানুষ, এমনকী ছাত্রছাত্রীরাও বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা পাচ্ছেন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। তাহলে চাষিরা পারবেন না কেন, সেই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।

এই চাপানউতোরেই প্রশ্নের মুখে চলতি মরসুমে আলুর ভবিষ্যৎ।

(সহ-প্রতিবেদন: সুমন ঘোষ এবং কেদারনাথ ভট্টাচার্য)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement