শাহজাহান শেখের নামাঙ্কিত সেই ফেসবুক পেজ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সাধারণতন্ত্র দিবসে ‘কভার ছবি’ বদলে গিয়েছিল শাহাজাহান শেখের ফেসবুক পেজে। আনন্দবাজার অনলাইনে সেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল। পাশাপাশি, ওই পেজে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে প্রশ্ন করা হয়েছিল, শাহজাহানের অনুমতি নিয়েই কি শুক্রবার, সাধারণতন্ত্র দিবসে কভার ছবি বদল করা হয়েছিল? এ প্রশ্নের যদিও জবাব দেওয়া হয়নি সেখানে। তবে তার পরেই ‘গায়েব’ সেই কভার ছবি।
তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে খোঁজ নেই শাহজাহানের। সাধারণতন্ত্র দিবসে তাঁর নামাঙ্কিত ফেসবুক পেজের কভার ছবি আচমকাই বদলে গিয়েছিল। সেখানে ভারতীয় পতাকার একটি ছবি পোস্ট করা হয়। যদিও ক্যাপশনে কিছু লেখা ছিল না। যে পেজ থেকে এই পোস্ট করা হয়েছিল, তাতে শাহজাহানের নামের পাশে নীল টিক (ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট হলে এই টিক দেখা যায়) না-থাকলেও শুরুতেই স্পষ্ট লেখা রয়েছে, এটি তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা কর্মাধ্যক্ষ শাহজাহান শেখের ‘অফিসিয়াল’ ফেসবুক পেজ। পেজটির বাকি পোস্টও শাহজাহানকে নিয়েই। এর আগে বিভিন্ন জনসভায় শাহজাহানের বক্তব্যের ভিডিয়ো ওই পেজে পোস্ট করা হয়েছে। পেজটিতে তাঁর ২৩ হাজার অনুগামী (ফলোয়ার) রয়েছেন। ওই ফেসবুক পেজ থেকে মাত্র চার জনকে ‘ফলো’ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতো এবং শেখ মাসুদ আজহার নামে এক ব্যক্তি।
শাহজাহান শেখের নামাঙ্কিত পেজ থেকে ডিলিট করা হয়েছে সেই কভার ছবি। ছবি: ফেসবুক থেকে।
শাহজাহানের নামাঙ্কিত ওই পেজ থেকে শেষ পোস্ট করা হয়েছিল ২ জানুয়ারি। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে তাঁর দেওয়া হুঁশিয়ারির ভিডিয়ো সে দিন ওই ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করা হয়েছিল। তার তিন দিন পর, ৫ জানুয়ারি থেকে তিনি নিখোঁজ। ওই দিনই সন্দেশখালিতে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন ইডি আধিকারিকেরা। ২ জানুয়ারির আগে পর্যন্ত সেই পেজ থেকে প্রায়ই কিছু না কিছু পোস্ট করা হলেও তার পর থেকে সেখানে কোনও পোস্ট করা হয়নি।
রাজনৈতিক নেতা বা বিশিষ্ট কারও ফেসবুক পেজ পরিচালনা করার জন্য অনেক সময়েই কোনও ব্যক্তিকে নিযুক্ত করা হয়। অনেকেই নিজেদের ফেসবুক পেজ নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করেন না। শাহজাহানের ক্ষেত্রে তা-ই হয়ে থাকলেও প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, শাহজাহানের সম্মতি ছাড়া কী ভাবে তাঁর ফেসবুক পেজের কভার ছবি বদল করা হল? আর যদি শাহজাহান নিজে সম্মতি দিয়ে থাকেন, তবে কোথায় বসে তিনি ফেসবুক পেজ নিয়ন্ত্রণ করছেন? প্রজাতন্ত্র দিবসে শাহজাহানের পেজে যে পোস্ট হয়েছিল, তার নীচে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তবে তিনি কোথায় রয়েছেন, তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলা হয়নি।
আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে এ নিয়ে ওই পেজে প্রশ্ন করা হলেও জবাব আসেনি। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে শাহজাহানের ভাই আলমগীরের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে তাঁর ফোন সুইচড্ অফ ছিল। ফেসবুক পেজটির অ্যাডমিনের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমারের সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘এটা তো ওঁর অফিসিয়াল পেজ। হয়তো অন্য কেউ এই পেজ পরিচালনা করেন।’’
গত ৫ জানুয়ারি শাহজাহানের সন্দেশখালির বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে গিয়ে আক্রান্ত হন ইডি অফিসারেরা। তিন আধিকারিকের জখম ছিল গুরুতর। তাঁদের সল্টলেকের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ইডির অভিযোগ, সে দিন বাড়িতেই ছিলেন শাহজাহান। ভিতর থেকে ফোন করে বাইরে লোক জড়ো করেন। তার পর পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশে গা ঢাকা দিয়েছেন বলেও ইডি সন্দেহ প্রকাশ করে। পরে আবার ইডির দল সন্দেশখালিতে গিয়েছিল। তালা ভেঙে শাহজাহানের বাড়িতে তারা তল্লাশি চালায়। তবে সে দিন আর উল্লেখযোগ্য কিছু পাওয়া যায়নি ওই বাড়িতে। বাড়িটি সিল করে দিয়েছে ইডি। শাহজাহানকে আগামী ২৯ জানুয়ারি কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দিতে বলে নোটিসও সেঁটে দিয়ে এসেছেন আধিকারিকেরা। প্রশ্ন উঠেছে, সে দিন কি হাজিরা দিতে যাবেন শাহজাহান? বিধায়ক সুকুমার জানিয়েছেন, শাহজাহান নিজের আইনজীবীকে পাঠিয়ে দিতে পারেন।
নিখোঁজ হওয়ার পর একটি অডিয়ো-বার্তা প্রকাশ্যে এসেছিল। সেখানে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমি শেখ শাহজাহান বলছি। এটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি যদি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকি, প্রমাণ যদি পাওয়া যায়, নিজের মুন্ডু নিজে কেটে দেব।’’ পুলিশ এখনও তাঁর খোঁজ চালাচ্ছে।