মরচে ধরা ব্যালট বাক্স রং করা চলছে কাটোয়ায়। —নিজস্ব চিত্র।
গত দশ বছরে ওদের প্রয়োজন পড়েনি। সরকারি কার্যালয়ের নানা ঘরে বন্দি হয়ে পড়ে থেকে রং উঠে, মরচে ধরে গিয়েছে অধিকাংশের। কোনওটি আবার বেঁকে-তুবড়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোট আসতেই নতুন রঙের প্রলেপ পড়ছে সেগুলিতে। কিন্তু সে সব ব্যালট বাক্সের ঢাকনা খোলাই বড় পরীক্ষা হয়ে উঠছে, বলছেন পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার ভোটকর্মীদের অনেকেই।
বিধানসভা, লোকসভা ভোটে ইভিএম ব্যবহার হলেও, পঞ্চায়েত ভোটে এখনও দরকার পড়ে ব্যালট বাক্সের। গত পঞ্চায়েত ভোটে গোটা কাটোয়া মহকুমার কোনও আসনে বিরোধী কোনও প্রার্থী না থাকায়, ভোটের প্রয়োজন পড়েনি। ফলে, ব্যালট বাক্সগুলি ব্যবহার হয়েছিল সেই ২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটে।
দিন দুয়েক আগে কাটোয়ার কেডিআই স্কুলে ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ব্যালট বাক্স খুলতে গিয়ে নাজেহাল হয়ে যান বহু কর্মী। তাঁদের দাবি, মরচে না তুলেই পুরু করে রং করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকনার ফাঁকে রং জমে যাওয়ায় বাক্স খোলাই যাচ্ছে না। ধারালো কিছু দিয়ে ঢাকনার চারপাশের রঙের আস্তরণ কেটে তা খুলতে হচ্ছে। ভোটের দিন শুরুতেই প্রত্যেক প্রার্থীর এজেন্টের সামনে খালি ব্যালট বাক্স খুলে দেখিয়ে তা সিল করতে হয়। কিন্তু এই সব বাক্স খুলবে কি না, সে নিয়েই এখন চিন্তায় ভোটকর্মীরা। তাঁদের আশঙ্কা, বাক্স না খুললে তখন গোলমাল বেধে যেতে পারে। আবার, বাক্স খুলতে গিয়ে অনেকটা সময় চলে গেলে ভোটের কাজে দেরি হয়ে যাবে।
অরিন্দম সাহা নামে এক ভোটকর্মী বলেন, ‘‘রীতিমতো ধারালো কিছু দিয়ে ঢাকনার চার পাশ কেটে জোর করে খুলতে হচ্ছে। বুথে কি ধারালো জিনিস নিয়ে গিয়ে এ সব করা সম্ভব?’’ বিষয়টি আগে থেকেই প্রশাসনের দেখা উচিত ছিল, দাবি তাঁর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আর এক ভোটকর্মীও বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের জন্য আলাদা বাক্স থাকে। প্রশিক্ষণের সময়ে তা আমাদের দেখানো হয়। কিন্তু প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ব্যালট বাক্স খোলায় সমস্যা দেখা দেয়। কোনও বাক্স কষ্ট করে খুলে ফেলা গেলেও, বন্ধ করতে সমস্যা হচ্ছিল। এমন সমস্যা ভোটের দিন হলে তো অশান্তিতে পড়ে যেতে পারি!’’
এমন সমস্যার কথা প্রশাসনের মাথায় আসেনি। মহকুমাশাসক (কাটোয়া) অর্চনা পন্ধরিনাথ ওয়াংখেড়ে বলেন, ‘‘বিষয়টি ভেবে দেখার মতো। তবে এ নিয়ে ভোটকর্মীরা আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ করেননি। তবু ব্যালট বাক্সগুলি পরীক্ষা করে দেখা হবে।’’