গঙ্গাসাগরে সরকারি নির্মাণ এবং প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে রাজ্য সরকারের হলফনামা তলব করল জাতীয় পরিবেশ আদালত তথা ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। শুক্রবার সুন্দরবনের দূষণ সংক্রান্ত মামলায় পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত ছবি ও তথ্য পেশ করে গঙ্গাসাগরের দূষণ নিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি প্রতাপ রায় এবং বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁর যুক্তি ছিল, গঙ্গাসাগরে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য কাঠের বাংলো-সহ একাধিক নির্মাণও নিয়ম ভেঙে হয়েছে। তার ভিত্তিতেই আদালত নির্দেশ দিয়েছে, এ ব্যাপারে রাজ্যের কী বক্তব্য, তা মুখ্যসচিবকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে।
আদালতের বাইরে সুভাষবাবু বলেন, গঙ্গাসাগরে পৌষ মাসের সংক্রান্তিতে মেলা বসবে। লক্ষ লক্ষ মানুষ আসবেন। সে সময় তো দূষণ আরও বাড়বে। গঙ্গাসাগরের শ্মশানেও মারাত্মক দূষণ ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তৃণমূলের সমাবেশের পর খাওয়ার পাতা, গ্লাস মাতলা নদীর চরে ফেলা হয়েছে। তা কতটা পরিবেশ নোংরা করেছে, সে ছবিও আদালতে দেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবনেরর পরিবেশ নিয়ে গ্রিন ট্রাইব্যুনাল স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছিল। সেই মামলায় একাধিক নির্দেশ দিয়েছিল পরিবেশ আদালত। তার মধ্যে গদখালিতে নদীর ধারে পর্যটন দফতরের একটি লজ নিয়ে জলঘোলা হয়। সেই লজ ভাঙার নির্দেশ দিলেও সরকার তা ভাঙেনি। তা নিয়ে আদালত বার বার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এ দিন পরিবেশ দফতর ও পর্যটন উন্নয়ন নিগমের তরফে হলফনামা জমা দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, ওই বাড়িটিতে লজের বদলে লবণাক্ত জল পরিশোধন কেন্দ্র বা ডি-স্যালিনেশন প্ল্যান্ট তৈরি করা হবে। যদিও আদালত এই প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, লজের আদলে তৈরি হওয়া বাড়িটিতে কি জলশোধনের কেন্দ্র বানানো সম্ভব?
এই মামলায় সুন্দরবনের বেআইনি হোটেল নিয়েও বিতর্ক চলছে। পরিবেশ আদালতের নির্দেশের জেরে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কয়েকটি হোটেল বন্ধ করলেও পরে ১৪টি হোটেলকে খুলে দেয়। এ দিন হোটেল সম্পর্কে পর্ষদের আইনজীবী অর্পিতা চৌধুরী আদালতে বলেন, তাঁরা দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের কাছ থেকে ১৬৪টি হোটেলের তালিকা পেয়েছেন। সেই সব হোটেলের মালিকের নাম-ঠিকানা সমেত সব তথ্য আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে। যে ১৪টি হোটেলকে খুলে দেওয়া হয়েছে, তাদের তথ্যও জমা দিতে বলা হয়েছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর এই হোটেল সংক্রান্ত বিষয়টি ট্রাইব্যুনালে শুনানি হবে।