মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন পাঁশকুড়ার পুরপ্রধান নন্দকুমার মিশ্র। রবিবার মেদিনীপুর যাওয়ার পথে পাঁশকুড়ার মেচগ্রামে। নিজস্ব চিত্র
সোমবার মেদিনীপুরে মমতার রাজনৈতিক সভা ঘিরে তীব্র হচ্ছে রাজনৈতিক জল্পনা। তৃণমূলনেত্রী কী বার্তা দেন, সে দিকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের নজর তো থাকবেই। সঙ্গে সভায় কারা যাচ্ছেন, কে অনুপস্থিত— সে সবেরও চুলচেরা বিশ্লেষণ হতে চলেছে এই সভায়। আরও তীক্ষ্ণ নজর থাকবে অধিকারী পরিবারের উপর। শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিলেও দল বা বিধায়ক পদ ছাড়়েননি। এমন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেত্রী তাঁকে বা তাঁর অনুগামীদের উদ্দেশ্য করে নতুন করে কিছু বলেন কিনা, তা ঘিরেও তীব্র হচ্ছে গুঞ্জন। আবার সোমবারের এই সভার মঞ্চে বক্তার তালিকায় রয়েছেন ছত্রধর মাহাতো। তাই এই সভা রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
শিশির অধিকারীর পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাই তিনি মমতার সভায় যাবেন না। রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত খবর, অধিকারী পরিবারের আর এক সাংসদ দিব্যেন্দুও মমতার সভায় থাকছেন না বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর। সোমবার তাঁর দিল্লি যাওয়ার কথা। আর যাঁকে ঘিরে গত কয়েক মাস ধরে প্রায় প্রতি দিন নতুন নতুন জল্পনা তৈরি হচ্ছে, সেই শুভেন্দু? নন্দীগ্রামের বিধায়কের ঘনিষ্ঠ মহল সুত্রে খবর, সোমবার তাঁর থাকার কথা কলকাতায়। সূতরাং শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদল না হলে মমতার সভায় অধিকারী বাড়ির কারও থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
অথচ তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব সূত্রে খবর, দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলার সব বিধায়ক-সাংসদকে মেদিনীপুরের সভায় যেতে বলেছেন তৃণমূল নেত্রী। পূর্ব মেদিনীপুরে তমলুক ও কাঁথি দুই কেন্দ্রেরই সাংসদ অধিকারী পরিবারের— শিশির এবং দিব্যেন্দু। জেলায় দলের বিধায়ক সংখ্যা ছিল ১২। তার মধ্যে এগরার বিধায়ক সমরেশ দাশ প্রয়াত। শুভেন্দু নিজেও বিধায়ক। বাকি ১০ জন বিধায়কের সবাই মমতার সভায় শেষ পর্যন্ত থাকেন কিনা, সে দিকে নজর থাকবে। শিশির আবার দলের পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সভাপতিও। দলনেত্রী তিন জেলার সভাপতিকেই সভায় থাকার কথা বলেছেন। সেই কারণে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি শিশিরকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু শিশির শারীরিক অসুস্থতার জন্য সভায় থাকতে পারবেন না বলে তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন। তবে শিশির আগেও বলেছেন, তিনি মমতার সঙ্গেই আছেন।
আরও পড়ুন: বিজেপি আজ ঝাঁপাচ্ছে শিলিগুড়িতে, উপস্থিত দিলীপ-মুকুল-কৈলাস-তেজস্বীরা
বেশ কিছু দিন ধরেই রাজ্য রাজনীতিতে একটা শব্দবন্ধ যুক্ত হয়েছে— ‘দাদার অনুগামী’। শুধু পশ্চিমাঞ্চল নয়, রাজ্যের প্রায় সর্বত্র, এমনকি খাস শহর কলকাতাতেও এই মর্মে পোস্টার পড়েছে। কিন্তু যাঁকে ঘিরে পোস্টার, তিনি এখনও ধোঁয়াশা জিইয়ে রেখেছেন। সেই পরিস্থিতিতে দুই জেলার নেতৃত্বের মধ্যেও আশা-আশঙ্কার দোলাচল।
মমতা দলের অন্দরমহলে, বিশেষ করে পূর্ব মেদিনীপুরে কড়া বার্তা পাঠিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠদের দলের পদ থেকে সরিয়ে। শিশিরকে দিয়েই নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের সভাপতি মেঘনাদ পাল, ভগবানপুর-২ ব্লক সভাপতি মানব পড়ুয়া, নন্দকুমার ব্লকের সুকুমার বেড়া, কাঁথি-১ ও ২ উত্তম বারিক ও মৃন্ময় পন্ডাকে সরিয়ে নতুন সভাপতি ঘোষণা করা হয়েছে। এই অপসারিত ব্লক সভাপতিরা মমতার সভায় থাকবেন কিনা, তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে নানা মহলে।
আরও পড়ুন: ‘ভারত বন্ধ’এর দিন ছেড়ে বুধবার রাজ্যে আসছেন বিজেপি সভাপতি নড্ডা
দলের ‘বিক্ষুব্ধ’দের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়ে মমতা বলে দিয়েছেন, ‘‘থাকলে থাকুন, নইলে লুটেরাদের দলে চলে যান।’’ সোমবার দলনেত্রী শুভেন্দু শিবিরের দিকে কী বার্তা দেন, তা নিয়েও দলীয় কর্মীদের আগ্রহ তুঙ্গে। সব মিলিয়ে সোমবার মেদিনীপুরের সভা থেকে আরও স্পষ্ট হতে পারে তৃণমূল নেত্রীর অবস্থান।