পরিদর্শন: ক্ষয়ক্ষতির পরে তালদি বাজারে পুলিশ। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই রাজনৈতিক সন্ত্রাস শুরু হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা প্রান্তে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা বিজেপি কর্মীদের বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর করছে বলে অভিযোগ উঠছে। সে কথা অবশ্য অস্বীকার করছেন শাসক দলের নেতারা।
মঙ্গলবার রাতে গোসাবার সাতজেলিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ঢুকে তাদের মারধর করে রেশনের চাল ও অন্যান্য সামগ্রী লুট করে নিয়ে আসা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কয়েকজনকে আটক করা হয়। বুধবার সকালে গোসাবার শম্ভুনগর পঞ্চায়েত এলাকার বহু বিজেপি কর্মীর বাড়িতে হামলা হয়। বিপ্রদাসপুর এলাকায় ১০-১২ জন বিজেপি কর্মীর বাড়িতে হামলা চলে বলে অভিযোগ।
ঝড়খালিতে মঙ্গলবার রাতে ফের গোলমাল হলে পুলিশ গিয়ে কয়েকজনকে আটক করে। বাসন্তীর চড়াবিদ্যা পঞ্চায়েত এলাকায় একাধিক বিজেপি ও আরএসপি কর্মীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুভাষ নস্করের কুমড়োখালির বাড়িতেও চড়াও হয় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। সে কথা অবশ্য মানেনি তৃণমূল।
ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের একাধিক জায়গায় মঙ্গলবার রাতে সন্ত্রাস চলে। বুধবার সকালেও তালদি বাজারে তৃণমূল কর্মীরা চড়াও হয়ে এক বিজেপি কর্মীর দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে। ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাস বলেন, “কারা এই অশান্তি ছড়াচ্ছে জানি না। দল ও প্রশাসনের তরফে এলাকায় শান্তি রাখার জন্য স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে।”
ভাঙড়ে আবার আইএসএফ প্রার্থীর জয়ের পর এই কেন্দ্রের তৃণমূল কর্মীদের মারধর ও বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। মঙ্গলবার রাতে ভাঙড়ের নলপুকপরের গাবতলা এলাকায় এক তৃণমূল কর্মীর তুলোর গোডাউনে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে আইএসএফ কর্মীদের বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ ও দমকলের একটি ইঞ্জিন। ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনেন দমকলকর্মীরা।
ভাঙড়ের কাশীপুর থানার চণ্ডীহাট, জয়পুর, নিমকুড়িয়া, শানপুকুর, গনিরআইট, কোচপুকুর, কৃষ্ণমাটি-সহ বিভিন্ন এলাকায়ও তৃণমূল কর্মীদের বাড়িঘর, দোকান ভাঙচুর, লুটপাট, মারধর করার অভিযোগ ওঠে। একাধিক জায়গায় তৃণমূল-আইএসএফ গোলমাল বাধে। পুলিশ গিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে।
আইএসএফের ভাঙড় ১ ব্লকের সভাপতি শরিফুল মোল্লা অবশ্য বলেন, “ভোটে হেরে যাওয়ার পর থেকে তৃণমূল কর্মীরাই আমাদের মারধর করছে। পুলিশ সহযোগিতা করছে না। ওরা আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছে।”
ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা এলাকায় বিজেপি, আইএসএফ কর্মীদের উপর আক্রমণের অভিযোগ উঠছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। গত দু’দিন ধরে এই বিধানসভা এলাকার মঠেরদিঘি, তাম্বুলদহ, তাড়দহ-সহ বিভিন্ন এলাকায় বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের বাড়িঘর, দোকান ভাঙচুর করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। বুলডোজার দিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ক্যানিং পশ্চিমের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী শওকত মোল্লা বলেন, “কোথাও কোনও গন্ডগোল না করার জন্য দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি। এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সব রকম ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে।”
বুধবার বিকেলে ডায়মন্ড হারবারের কুলেশ্বর ফকিরপাড়ায় আইএসএফ সমর্থকদের বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পাড়ায় দুই পরিবারের মধ্যে জমির দখল নিয়ে বিবাদ চলছিল। দুই পরিবারের একটি তৃণমূল ও অন্যটি সংযুক্ত মোর্চার সমর্থক। অভিযোগ, তৃণমূল জেতার পরে এ দিন বিকেলে জোর করে জমির দখল নিতে যায় তৃণমূল সমর্থক পরিবারের সদস্যেরা। হাতাহাতি বাধে। দুই পক্ষের কয়েকজন জখম হয়। অভিযোগ, এরপরেই তৃণমূলে দুষ্কৃতীরা আইএসএফ কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
ডায়মন্ড হারবার ১ ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি উমাপদ পুরকাইত অবশ্য বলেন, “মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। পারিবারিক বিষয়ে ওই ঘটনা ঘটেছে। এতে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।”