ক্ষিপ্ত কর্মীদের সঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। সোমবার ধর্মতলা চত্বরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
যে সব প্রশ্নে এখন সরগরম রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতি, সেই সংক্রান্ত কিছু দাবি নিয়েই একটা মিছিল। বারবার সেই মিছিলের পথ রুদ্ধ করার চেষ্টা করল পুলিশ। ক্ষিপ্ত হয়ে রাস্তায় বসে পড়ে প্রতিবাদ করলেন মিছিলকারীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাড়ে ছয় বছরের জমানায় এই নিয়ে দ্বিতীয় বার রাস্তায় বসতে দেখা গেল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদককেও। আর এ সবের জেরে সোমবার সন্ধ্যায় ব্যস্ত সময়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেল কলকাতা শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা চত্বর!
নোট বাতিলে মানুষের হয়রানির প্রতিবাদ এবং সারদা, রোজভ্যালি-সহ নানা কেলেঙ্কারিতে রাঘব বোয়ালদের গ্রেফতারের দাবিতে কলকাতা জেলা সিপিএমের ডাকে মহামিছিল ছিল এ দিন। কিন্তু ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে জমায়েত করে শুরু করা যাবে না, সন্ধ্যার পরে মিছিল করা যাবে না এবং সর্বোপরি হাজরা মোড়ের দিকে যাওয়া যাবে না— এমন নানা নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে মিছিলকে বেশি দূর এগোতেই দিতে চায়নি পুলিশ। বাধা পেয়ে উত্তেজিত সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা প্রথমে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ ও পরে জওহরলাল নেহরু রোড অবরোধ করে অবস্থানে বসেন। কর্মীদের সঙ্গে রাস্তার বিক্ষোভে যোগ দেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীরা। তাঁদের প্রশ্ন, ১৪৪ ধারা থাকা সত্ত্বেও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কলকাতা দফতরের সামনে তৃণমূল যদি মঞ্চ বেঁধে বিক্ষোভ করতে পারে, বিরোধীরা রাজপথে একটা নিরীহ মিছিল করতে পারবে না কেন?
সিপিএমের মিছিলের দিন একই প্রশ্ন তুলেছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসও। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান এ দিন বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের মতোই মঞ্চ বেঁধে নরেন্দ্র মোদীর পদত্যাগ দাবি করব ১৮ জানুয়ারি। ওই দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে বিক্ষোভ-সভা করার অনুমতি পেতে কলকাতা পুলিশের কাছে লিখিত অনুরোধ করা হয়েছে।’’ পুলিশ-কর্তারা অবশ্য পরিস্থিতি ক্রমেই হাতের বাইরে যাচ্ছে দেখে এ দিন শেষ বেলায় সিপিএম নেতৃত্বকে বিনীত ভাবেই অনুরোধ করেছেন অবস্থান তুলে নিতে।
সূর্যবাবু বলেন, ‘‘হাজরা মোড়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দিকে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। আমরা তৃণমূল নই যে, হঠাৎ প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বিক্ষোভ দেখাতে ঢুকতে যাব! কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যে নবান্নে আমরা দাবি জানাতে যাব। সে দিন শুধু লাল ঝান্ডাই দেখা যাবে।’’ সূর্যবাবুর সুরেই এ দিন রাজারহাটে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব বলেন, তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা কী ভাবে সম্পত্তি বাড়িয়ে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন, সেই গোটা রহস্যের উদঘাটন দরকার। সল্টলেকে আগামী ১৮ জানুয়ারি সমাবেশ করে সিবিআই এবং ইডি-র কাছে তদন্তের ব্যাপারে দাবিপত্র দেবেন গৌতমবাবুরা।