জাল নথি দাখিলেই পাসপোর্ট, অভিযুক্ত পুলিশ

রাজ্য সরকারের গোয়েন্দা পুলিশ বা ডিআইবি-র চার অফিসারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের ভিত্তিতেই সম্প্রতি তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। জাল নথি দাখিল করে পাসপোর্ট তৈরির কয়েকটি চক্রের সঙ্গে ওই অফিসারদের যোগসাজশেরও প্রমাণ মিলেছে বলে পুলিশের দাবি।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৭ ০৪:০৬
Share:

পাসপোর্ট পেতে সাধারণ মানুষ যাতে নাজেহাল না-হন, তা দেখার দায়িত্ব ওঁদের। ভুয়ো নথি দাখিল করে কেউ যাতে পাসপোর্ট করাতে না-পারেন— তারও তদন্তের দায়িত্বে থাকেন ওই অফিসারেরা। অথচ মোটা টাকার বিনিময়ে জাল তথ্যের ভিত্তিতেই পাসপোর্ট করিয়ে দিচ্ছেন ওঁরাই!

Advertisement

রাজ্য সরকারের গোয়েন্দা পুলিশ বা ডিআইবি-র চার অফিসারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের ভিত্তিতেই সম্প্রতি তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। জাল নথি দাখিল করে পাসপোর্ট তৈরির কয়েকটি চক্রের সঙ্গে ওই অফিসারদের যোগসাজশেরও প্রমাণ মিলেছে বলে পুলিশের দাবি।

চার অভিযুক্তের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ নামে ডিআইবি-র এক সাব-ইনস্পেক্টরের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে এফআইআর করেছে উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশ। এর মধ্যে তিনি অবসরও নিয়েছেন। আরও তিন জন সাব-ইনস্পেক্টরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জাল নথির ভিত্তিতে পাসপোর্ট তৈরির কয়েকটি চক্র ধরা পড়েছে। ধৃতদের জেরা করেই তাদের সঙ্গে ওই পুলিশকর্মীদের যোগসাজশের তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তাই তদন্ত চলছে অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধেও।’’

Advertisement

পুলিশের আশঙ্কা, জাল নথির জোরে যারা পাসপোর্ট পেয়েছে, তাদের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী থেকে অনেক জঙ্গিও রয়েছে। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বৈধ নথি না-থাকলেও অনেকে পাসপোর্ট করাতে ডিআইবি অফিসে যান। সেই সব লোককে চক্রের কাছে পাঠিয়ে দিতেন অভিযুক্ত অফিসারেরা। আবার দালালদের ধরে আনা খদ্দেরদের পাসপোর্ট পাইয়ে দেওয়ার কাজও করতেন তাঁরা।

কী ভাবে কাজ করত এই চক্র?

পুলিশ সুপার জানান, কয়েকটি ফোটোকপি দোকান ঠিক করা থাকত। যাঁরা ওই সব দোকানে ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড ইত্যাদির ফোটোকপি করাতে যেতেন, তাঁদের নথির একটি করে প্রতিলিপি রেখে দেওয়া হতো। যাঁদের বৈধ নথিপত্র নেই অথচ পাসপোর্ট প্রয়োজন, তাঁদের ছবি ওই প্রতিলিপিতে সেঁটে ফের ফোটোকপি করা হতো। তার পরে সেই জাল প্রতিলিপিই ব্যবহার করা হতো পাসপোর্টের আবেদনপত্রে।

এ ছাড়াও যাঁরা ভুয়ো প্রমাণপত্র দেখিয়ে আবেদন করতেন, তাঁদের নাম আগেই সংশ্লিষ্ট ডিআইবি অফিসারদের জানিয়ে দিত দালালেরা। তার ভিত্তিতে অভিযুক্ত অফিসারেরা ওই সব পাসপোর্টের তথ্য যাচাইয়ের দায়িত্ব নিতেন। সব তথ্য ‘ঠিক’ আছে বলে পাসপোর্ট অফিসে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিতেন তাঁরাই।
সেই ‘ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট’-এর ভিত্তিতেই পাসপোর্ট তৈরি হয়ে যেত।

চক্রের কথা জানা গেল কী ভাবে?

পুলিশকর্তা জানান, এক ব্যক্তি আমডাঙা থানায় অভিযোগ করেন, তিনি পাসপোর্ট করতে দিয়ে জানতে পারেন, তাঁর নামে আগেই পাসপোর্ট করা হয়েছে! তদন্ত নেমে বারাসত, মধ্যমগ্রাম, দত্তপুকুর, দেগঙ্গা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে পাসপোর্ট তৈরির চক্রের ১১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উদ্ধার
হয় নকল ভোটার কার্ড, জন্মের শংসাপত্র তৈরির সরঞ্জাম, ব্যাঙ্কের জাল পাসবই এবং আটটি পাসপোর্ট। ধৃতদের জেরা করে ওই অফিসারদের নাম পাওয়া যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement