অমৃতসর এক্সপ্রেসে নাবালিকাকে গণধর্ষণ ঘটনায় অভিযুক্ত পলাতক দুই সেনার খোঁজে নেমে রেল পুলিশ কার্যত অন্ধকারে হাতড়াচ্ছে। কারণ তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত কামরার কোনও আসন সংরক্ষণের তালিকা রেলের কাছে থাকে না। ফলে তাঁদের নাম পরিচয়ও জানা অসম্ভব। এই তথ্য জানতে পারার পরেই অথৈ জলে পড়েছেন ঘটনার তদন্তকারীরা। তদন্তে সাহায্যের জন্য রেল পুলিশের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
ঘটনার তদন্তে নেমে রেল পুলিশ জানতে পারে, ট্রেনের যে সব কামরা সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত থাকে তাতে সেনা জওয়ানরা তাঁদের বাহিনীর সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে ‘ট্রাভেল পাস’ নিয়ে ট্রেন সফর করেন। ফলে তাঁদের নাম ও পরিচয় সবই থাকে সেনাবাহিনীর কাছে। আর এই কারণেই ঘটনার ৭২ ঘন্টা পরও তদন্তকারীরা অভিযুক্ত পলাতক দুই সেনার নাম পরিচয় যেমন জানতে পারেনি তেমনি তাদের গ্রেফতারের ব্যাপারে রেল পুলিশ এক ইঞ্চি এগোতে পারেনি। তদন্তকারীদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর নিজস্ব তদন্ত ছাড়া ওই দুই পলাতক সেনার নাগাল পাওয়া প্রায় অসম্ভব। যদিও এ ব্যাপারে সমস্ত রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাতেই পাওয়া গিয়েছে বলে রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার মধুপুর থেকে ওই নাবালিকা ও ধৃত সেনা জওয়ানকে নিয়ে আসার পর সকলেই সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনার তদন্তে আসেন। রেল পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার বেশি রাতে হাওড়া জিআরপি থানায় আসেন ভারতীয় সেনা বাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলের লেফট্যান্যান্ট কর্ণেল জি মনোজ। তিনি জানান, দিল্লির সদর দফতরের নির্দেশে সেনাবাহিনী আলাদা ভাবে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ঘটনার দিন হাওড়া স্টেশনের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গণ ধর্ষণের ঘটনায় ধৃত সেনা জওয়ান মঞ্জরীশ ত্রিপাঠীকে আদালত সাতদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ার পর মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত দফায় দফায় জেরা করা হয়। এ দিন দুপুরে তাঁকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর শারীরিক পরীক্ষার জন্য। আগামী ৬ জানুযারী ফের ওই জওয়ানের বিশেষ পরীক্ষা হবে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। এ দিকে ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা যে দু’টি তথ্য জানতে পেরেছেন তা হল ১) ওই তিন জওয়ান একসঙ্গে মদ্যপান করেছিল। ২) দু’জন জওয়ান মঞ্জরীশকে জানিয়েছিলেন তাঁরা ছুটি থেকে ফিরে রেজিমেন্টে যোগ দিতে যাচ্ছেন। এই দু’টি তথ্য ও মধুপুর রেল পুলিশের দেওয়া ঘটনার দিন ওই কামরায় তোলা ভিডিও ফুটেজ থেকে অভিযুক্তদের ছবি দেখে তদন্তের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।