জয় শ্রীরাম শুনে গাড়ি থেকে নেমে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
ভাটপাড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের সামনে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে ভাটপাড়া এলাকা থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বদলি করা হল জগদ্দল থানার আইসি চন্দ্রশেখর দাসকেও। মাত্র পাঁচ দিন আগেই ওই থানার দায়িত্ব পেয়েছিলেন চন্দ্রশেখর বাবু।
ভাটপাড়া এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি চলে যাওয়ার পর থেকেই সক্রিয় হয়ে ওঠে পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে ঘরে ঘরে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। রাতভর তল্লাশির পর জগদ্দল থানার পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার সময় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা পুলিশ কর্মীরা এবং এক শীর্ষ আইপিএস মোবাইলে ঘটনাটি রেকর্ড করেন। সেই ভিডিয়োর ভিত্তিতেই আটকদের মধ্যে থেকে ১০ জনকে চিহ্নিত করা হয় এবং তাঁদের এ দিন সকালে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে ধৃতদের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের নিরাপত্তা ভাঙা এবং বাধা তৈর্ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। সূত্রের খবর ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৬ এবং ৩৪১ ধারায় মামলা করা হয় ধৃতদের বিরুদ্ধে।
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক শীর্ষ কর্তা যদিও দাবি করেছেন যে মুখ্য়মন্ত্রীর কনভয়ের সামনে জয় শ্রীরাম স্লোগান দেওয়ার জন্য় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তিনজন দুস্কৃতীকে নির্দিষ্ট মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়াও কয়েকজনকে নাকা তল্লাশির সময় গ্রেফতার করা হয় সন্দেহভাজন হিসাবে।
তবে ভাটপাড়া পুরসভা এলাকার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দাবি, বেছে বেছে তাঁদেরকেই পুলিশ নিয়ে গিয়েছে যাঁরা ওই দিন রাস্তায় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় যাওয়ার সময়। তবে এ দিন বিকেলেই সবাই জামিন পেয়ে যান।
গ্রেফতারের ঘটনায়, ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহের মন্তব্য,‘‘ এটা কোথাকার নিয়ম যে জয় শ্রীরাম বললে গ্রেফতার করা হবে? রাজ্য ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের দাবি তোলেন তিনি।” তিনি বলেন ওই গ্রেফতারির প্রতিবাদে শনিবার জগদ্দল এবং নৈহাটি থানা ঘেরাও করবে বিজেপি।
আরও পড়ুন: সামনে আয় দেখি, কত বড় বিজেপির বাচ্চা: মমতা
শুক্রবার নৈহাটিতে রাজনৈতিক কর্মসূচীতে যোগ দিতে যাওয়ার পথে দু’বার গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। একবার নৈহাটির নদিয়া জুটমিলের সামনে। দ্বিতীয়বার ভাটপাড়ার রিলায়েন্স জুটমিলের সামনে। দুই জায়গাতেই মুখ্যমন্ত্রী যাওয়ার সময় রাস্তার ধারে অপেক্ষারত জনতার একাংশ ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেন।
সেই স্লোগান শুনেই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি গাড়ি থেকে নেমে যাঁরা স্লোগান দিচ্ছিলেন তাঁদেরকে চ্যালেঞ্জ করেন। তাঁর সঙ্গে থাকা তিন পুলিশ কর্তা, ডিজি বীরেন্দ্র, বিনীত গোয়াল এবং নীরজ সিংহকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে বলেন। তিনি নিজেই ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে দাবি করেন যে যাঁরা স্লোগান দিয়েছেন তাঁরা সব বহিরাগত।
স্থানীয়দের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী যাওয়ার পরই পুলিশের বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে আসে। তাঁরা বাড়ি বাড়ি ঢুকে যুবকদের আটক করা শুরু করে। স্থানীয়দের দাবি, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা সকলেই স্থানীয় বাসিন্দা, কেউ বহিরাগত নন।
অন্যদিকে ধৃতরা জামিন পেয়ে যাওয়ার পরেই বিকালে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয় চন্দ্রশেখর দাসকে। গত ২৭ মে তাঁকে নদিয়ার নাকাশিপাড়ার সার্কল ইনস্পেক্টর পদ থেকে বদলি করে জগদ্দল থানার আইসি-র দায়িত্ব দেওয়া হয়। শুক্রবারের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চন্দ্রশেখর বাবুর দায়িত্ব নেবেন অরিন্দম মুখোপাধ্য়ায়। তিনি বোলপুরের সার্কল ইনস্পেক্টর পদে ছিলেন। চন্দ্রশেখরবাবুকে বিষ্ণুপুরের কোর্ট ইনস্পেক্টর পদের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে। পুলিশ কর্তাদের ইঙ্গিত, বৃহস্পতিবারের ঘটনার জেরেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এই বদলি।
(এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতে ভুলবশত অমিত শাহের নাম দেওয়া হয়েছিল। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত)