এলাকায় চলছে পুলিশি টহল। —নিজস্ব চিত্র।
ফের বিধানসভা নির্বাচন এসে গেল। কিন্তু ক্যানিঙে পুলিশের উপরে হামলায় দাঁড়ি পড়ল না!
পাঁচ বছর আগে রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই মহকুমায় বারবার আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। কখনও শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থামাতে গিয়ে, কখনও দুষ্কৃতী ধরতে গিয়ে, কখনও বা চাষিদের ক্ষতিপূরণের ফর্ম বিলিকে ঘিরে রাজনৈতিক সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে। রবিবার সকালে তারা ফের আক্রান্ত হল থানার সামনেই। এ বার ঘটনার নেপথ্যে জমি নিয়ে গ্রামবাসীদের দু’পক্ষের একটি বিবাদ। আক্রান্ত এএসআই রমেশ দাস ও এএসআই তাপসকান্তি দে’র প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত স্থানীয় তৃণমূল নেতা মুকেশ মণ্ডল। তিনি পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ভোটের মুখে এই ঘটনায় দলীয় নেতার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের ভাইস-চেয়ারম্যান শক্তি মণ্ডল জানিয়েছেন, পুলিশের উপর যারাই আক্রমণ করুক না কেন, ঠিক করেনি। পুলিশকে বলব নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার জন্য। দলের কেউ এই ঘটনায় যুক্ত থাকলে দল পাশে দাঁড়াবে না।আইন আইনের পথে চলবে। পুলিশ জানিয়েছে, মুকেশের বিরুদ্ধে এর আগেও নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, ‘‘গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আপাতত ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
ঘটনাটি কী?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে স্থানীয় বাসিন্দা কানন মল্লিকের সাড়ে চার বিঘা জমি থেকে জহর পৈলান নামে এক ব্যক্তি আড়াই বিঘা জমি কেনেন। পরবর্তী সময়ে কাননবাবু তাঁর বাকি জমিও বিক্রি করবেন বলে স্থির করেন। সেই জমি ওই এলাকারই মুজিবর মোল্লা, সাত্তার লস্কর-সহ কয়েক জন কিনবেন বলে স্থির করেন। তাঁরা জমির বায়নাও দেন। কিন্তু এর মধ্যে জহরবাবু ওই জমি অতিরিক্ত দামে কিনে নেন। ফলে, জহরবাবুর সঙ্গে মুজিবরদের বিবাদ বাধে। জহরবাবুকে সমর্থন করেন তৃণমূল কর্মী বলরাম মণ্ডল। অন্য দিকে সিরাজুল, সাত্তারদের সমর্থন করেন তৃণমূল নেতা মুকেশ মণ্ডল। ফলে, গ্রামে দু’টি পক্ষ হয়ে যায়।
রবিবার সকালে ওই বিবাদ মেটানোর জন্য বলরামবাবু উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। অভিযোগ, সেখানে মুকেশ তাঁর লোকজন নিয়ে এসে ঝামেলা শুরু করেন। জহরবাবুর ছেলে হান্নানকে মারধর করা হয়। বলরামবাবু ও হান্নান থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। মুকেশ তখন গ্রামের কিছু লোককে থানায় বিক্ষোভ দেখানোর জন্য পাঠান বলে অভিযোগ।
থানায় ঢোকার সময়ে দুই এএসআই বিক্ষোভকারীদের বাধা দেন। তখনই তাঁদের কিল, চড়, ঘুষি মারা হয় বলে অভিযোগ। থানার অন্য পুলিশেরা বেরিয়ে এলে হামলাকারীরা চম্পট দেয়। এরপর ক্যানিং থানার ওসি আশিস দাস বাহিনী নিয়ে ওই এলাকায় গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে ৯ জনকে গ্রেফতার করেন।
বলরামবাবুর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই মুকেশ আমাকে মেনে নিতে পারতেন না। এ দিন সকালে একটি জমি নিয়ে গ্রাম্য বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করছিলাম। সে সময় মুকেশ তার লোকজন নিয়ে এসে আমাদের উপরে হামলা চালায়। আমাকে মারধর করে।’’ মুকেশের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।