দিল্লিতে আমলা তলব

কেন্দ্র বলছে তালিম, মমতার মতে মগজ ধোলাই

শিয়রে বিধানসভার ভোট। এখন যাঁদের জেলায় জেলায় কাজে নেমে পড়ার কথা, সদ্য পাশ করা পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের এমন ১২ জন আইএএস অফিসারকে আরও এক দফা প্রশিক্ষণের জন্য দিল্লিতে তলব করেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। তিন মাস তাঁদের প্রশিক্ষণ হবে কেন্দ্রীয় সচিবালয়ে।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:০১
Share:

শিয়রে বিধানসভার ভোট। এখন যাঁদের জেলায় জেলায় কাজে নেমে পড়ার কথা, সদ্য পাশ করা পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের এমন ১২ জন আইএএস অফিসারকে আরও এক দফা প্রশিক্ষণের জন্য দিল্লিতে তলব করেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। তিন মাস তাঁদের প্রশিক্ষণ হবে কেন্দ্রীয় সচিবালয়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জরুরি’ কাজ ফেলে নরেন্দ্র মোদীর ‘মামুলি’ তালিম নেওয়ার জন্য কেন তাঁদের ডেকে পাঠানো হল, সেই প্রশ্নে নবান্ন তোলপাড়।

Advertisement

কেন্দ্রের যুক্তি— প্রশাসনের তৃণমূলস্তরে যোগ দেওয়ার আগে নতুন আইএএসদের কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের কাজ সম্পর্কে ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। অন্য দিকে নবান্নের মাথাদের দাবি— রাজ্যে আট মাস কাজ শেখার পরে কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের কাজ আলাদা ভাবে বোঝার তেমন
দরকার পড়ে না। প্রশিক্ষণের বাহানায় এ আসলে ‘মগজ ধোলাই’-এর বন্দোবস্ত বলে মনে করছে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহল। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধন শুরু হয়েছে। অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। এমন সময় তিন মাসের জন্য অফিসারদের ডেকে নেওয়ার কোনও মানে হয় না। মগজ ধোলাইয়ের চেয়ে উন্নয়ন বড়।’’

কেন্দ্রের তরফে যদিও এ হেন অভিযোগকে সরাসরি নস্যাৎ করা হচ্ছে। ‘‘কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের কাজ বোঝাতেই নতুন আইএএসদের তিন মাস বিভিন্ন মন্ত্রকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে।’’— বলছেন কর্মিবর্গ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এখানে মগজ ধোলাইয়ের প্রশ্ন নেই। বরং দেশ পরিচালনার সর্বোচ্চ স্তরের সঙ্গে আনকোরা অফিসারদের পরিচয় করিয়ে দিতেই প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত।’’

Advertisement

ইউপিএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার ফি বছর হাজারখানেক অফিসার নিয়োগ করে থাকে। আইএএস, আইপিএস, আইএফএস, আইআরএসের মতো বিভিন্ন কেন্দ্রীয় স্তরের গ্রুপ ‘এ’ অফিসারদের দীর্ঘ প্রশিক্ষণপর্ব চলে মূলত মুসৌরি, ভোপাল, নাগপুর, হায়দরাবাদের বিবিধ প্রতিষ্ঠানে। আইএএস, আইপিএস, আইএফএসের ক্ষেত্রে চার মাসের প্রথম দফার তালিম হয় মুসৌরির লালবাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এ। তা শেষ হলে শিক্ষানবিশ অফিসারদের দু’মাস ধরে গোটা দেশে ঘোরানো হয়। এর পরে আইএএসদের ১৫ সপ্তাহের বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য ফের যেতে হয় মুসৌরি।

এবং তখনই অফিসারদের ‘ক্যাডার’ নির্বাচন হয়। অর্থাৎ ঠিক করে ফেলা হয়, কোন অফিসার কোন রাজ্যে গিয়ে কাজ করবেন। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ভাষা শেখানোর
পালাও চলে এই বিশেষ ‘ট্রেনিং সেশনে।’ তার পরে আট মাস ওঁরা রাজ্যে গিয়ে তৃণমূলস্তরে কাজ শেখেন। অন্তিম ধাপে ছ’সপ্তাহের জন্য ফের মুসৌরিতে তালিম। সেই পালা মিটলে আইএএস অফিসারেরা নির্দিষ্ট রাজ্যের ক্যাডার হিসেবে কাজে যোগ দেন।

এত দিনকার প্রচলিত ব্যবস্থাটিতে এ বার কিছু বদল এনেছে কর্মিবর্গ মন্ত্রক। কী রকম?

গোড়ায় ঠিক ছিল, ২০১৩ ব্যাচের ১৮৭ জন আইএএস অফিসারের নির্ধারিত যাবতীয় প্রশিক্ষণের পালা অগস্টে শেষ হয়ে গেলে সেপ্টেম্বরেই তাঁরা নির্দিষ্ট রাজ্যের ক্যাডার হিসেবে চাকরি শুরু করবেন। কিন্তু প্রশিক্ষণপর্ব শেষের মুখে প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানায়, বিভিন্ন মন্ত্রকের সচিবালয়ের কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে ২০১৩ ব্যাচের সব অফিসারকে তিন মাসের জন্য দিল্লি যেতে হবে। এই তিন মাস তাঁরা কেন্দ্রীয় সচিবালয়ে সহকারী সচিবের পদে থাকবেনরাজ্যে যোগ দেওয়ার প্রাক্কালে নবনিযুক্ত আইএএসদের দিল্লি এ ভাবে ডেকে নেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেজায় চটেছেন। নবান্ন সূত্রের খবর: প্রাথমিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের ১২ জনকে দিল্লি পাঠানো হবে না। বরং তাঁরা বিভিন্ন মহকুমার দায়িত্ব নিয়ে এখানেই কাজ শুরু করে দেবেন। রাজ্য সরকারের মনোভাবের আঁচ পেয়ে পেরে কর্মিবর্গ মন্ত্রক আবার নবান্নে যোগাযোগ করে। জানিয়ে দেয়, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া সব রাজ্যের অফিসারেরা দিল্লিতে তালিম নিচ্ছেন। এমতাবস্থায় দলছুট হয়ে পড়লে পশ্চিমবঙ্গ পরে সমস্যায় পড়বে বলেও দিল্লি সতর্ক করে দেয়।

এর পরে নতুন ১২ জন আইএএস-কে দিল্লি পাঠাতে সম্মত হন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এ-ও জানিয়েছেন, তাঁর সম্মতি শুধু চলতি বছরের জন্য।

প্রাক্তন আমলারা অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছেন। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রাজস্ব-সচিব সুনীল মিত্রের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ ভাবে কারও মগজ ধোলাই করা যায় না। কেন্দ্রীয় সচিবালয়ে নতুন আইএএসদের প্রশিক্ষণ খুব কার্যকর হবে। তাঁরা প্রশাসনিক কাজকর্ম সম্পর্কে ধারণা নিয়ে তৃণমূলস্তরে
যোগ দিতে পারবেন।’’ প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকারও মনে করেন, চাকরির সূচনায় সচিবালয়ের প্রশিক্ষণ যথেষ্ট উপযোগী। ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্য— দুই সচিবালয়ে তালিমের ব্যবস্থা হলে আরও ভাল হতো।’’— পর্যবেক্ষণ জহরবাবুর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement