Suvendu Adhikari

দিঘায় জগন্নাথধাম উদ্বোধনের দিনে কি কাঁথিতে হবে শুভেন্দুর সনাতনী সভা? দীর্ঘ শুনানির পরেও হল না মামলার নিষ্পত্তি

আগামী বুধবার দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন হচ্ছে। ওই একই দিনে কাঁথিতে একটি সনাতনী সম্মেলনের ডাক দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী এক সংগঠন। সেখানে বক্তৃতা করার কথা শুভেন্দু অধিকারীর। কিন্তু ওই সভায় পুলিশি অনুমতি মেলেনি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ২০:০৬
Share:
হাই কোর্টে সোমবার দীর্ঘ শুনানির পরেই নিষ্পত্তি হল না কাঁথিতে শুভেন্দু অধিকারীর বুধবারের সভা সংক্রান্ত মামলা।

হাই কোর্টে সোমবার দীর্ঘ শুনানির পরেই নিষ্পত্তি হল না কাঁথিতে শুভেন্দু অধিকারীর বুধবারের সভা সংক্রান্ত মামলা। —ফাইল চিত্র।

দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের দিনেই (৩০ এপ্রিল, বুধবার) কাঁথিতে সনাতনী হিন্দু সম্মেলনের আয়োজন সংক্রান্ত মামলার সোমবারও নিষ্পত্তি হল না কলকাতা হাই কোর্টে। সোমবার দীর্ঘ ক্ষণ ধরে এই মামলার শুনানি চলে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে। সরাসরি উদ্যোক্তা না-হলেও কাঁথির এই কর্মসূচির অন্যতম মুখ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। একই দিনে কাঁথিতে কর্মসূচির বিষয়ে সোমবারও হাই কোর্টে আপত্তি জানায় রাজ্য। ৩০ এপ্রিলের বদলে অন্য কোনও দিন কাঁথির ওই কর্মসূচি আয়োজনের প্রস্তাবও দেয় রাজ্য। তবে মামলাকারী পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য, দিঘা থেকে কাঁথি অনেকটাই দূরে। সে ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে করা যেতেই পারে। কেন ওই কর্মসূচিতে আপত্তি জানানো হচ্ছে, তা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তোলেন মামলাকারীর আইনজীবী।

Advertisement

এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের আয়োজনে কাঁথির ওই সম্মেলনে বক্তব্য রাখার কথা শুভেন্দুর। কিন্তু ওই কর্মসূচির জন্য পুলিশি অনুমতি মিলছে না বলে অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে মামলা দায়ের হয়। গত সপ্তাহে মামলার শুনানিতে এই বিষয়ে রাজ্যকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলেছিলেন বিচারপতি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছিল। সোমবার মামলাটি শুনানির জন্য উঠলে আগের অবস্থানেই অনড় থাকে রাজ্য। রাজ্যের তরফে বলা হয়, ওই দিন মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি রয়েছে। সেটি একটি বড় অনুষ্ঠান। বিভিন্ন ‘ভিভিআইপি’ অতিথিরা আসবেন। সেখানে নিরাপত্তা জনিত কারণে প্রচুর পুলিশকর্মী প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে একই দিনে কাঁথিতে সভা করার অনুমতি দেওয়া যাবে না। রাজ্য আরও জানায়, ৩০ এপ্রিলের পরিবর্তে অন্য যে কোনও দিন ওই কর্মসূচি হলে তাদের কোনও আপত্তি নেই।

রাজ্য সরকারের হয়ে সোমবার হাই কোর্টে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দু’টি বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিচারপতি ঘোষের এজলাসে সওয়ালে তিনি বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী এত দিন পর্যন্ত দু’টি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাদ বাধাতে চাইছিলেন। এ বার তিনি হিন্দুদের মধ্যেই বিরোধ তৈরি করতে চাইছেন।” সাম্প্রতিক সময়ের শুভেন্দুর একটি মন্তব্য উল্লেখ করে কল্যাণ সওয়ালে বলেন, “বিরোধী দলনেতা মন্তব্য করেছেন জগন্নাথ ধামে যাঁরা যাবেন তাঁরা জালি হিন্দু, সনাতনী সমাবেশে যাঁরা আসবেন তাঁরা আসলি হিন্দু।” আদালতের উদ্দেশে কল্যাণের প্রশ্ন, “এক জন ব্যক্তি কি ঠিক করে দিতে পারেন কে ‘আসল’ হিন্দু, কে ‘নকল’ হিন্দু? এ তো পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজনার জায়গায় নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস।”

Advertisement

এজলাসে কল্যাণ আরও জানান, জগন্নাথ ধামের উদ্বোধনের জন্য ইতিমধ্যে প্রচুর মানুষ দিঘায় গিয়েছেন। যেখানে সনাতনী সমাবেশ হবে বলে দাবি করা হচ্ছে, সেটি কাঁথিতে। সেটিও একই জেলার মধ্যে পড়ে। পূর্ব মেদিনীপুরে। তাঁর প্রশ্ন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে তার দায় কে নেবে? সওয়ালে কল্যাণ বলেন, “কোথায় কত মানুষের জমায়েত হবে, জমায়েতের মাত্রা কতটা ছাড়ালে আইনশৃঙ্খলা ঠিক থাকবে, তা রাজ্যই ঠিক করবে। এটি রাজ্যের ব্যাপার। এটি কোর্টও রাজ্য সরকারকে বলতে পারে না।”

বস্তুত, এই মামলার ওকালতনামায় পাঁচ জনের নাম রয়েছে। যদিও তাঁদের মধ্যে এক জনের দাবি, তিনি ওকালতনামায় সই-ই করেননি। কেউ তাঁর সই নকল করেছেন। সে বিষয়টি ইতিমধ্যে আদালতের নজরেও এনেছেন তিনি। সোমবার মামলাকারীদের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য। দিঘা থেকে কাঁথির দূরত্বের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, একই জেলায় হলেই দিঘা থেকে কাঁথির দূরত্ব অনেকটাই। জেলায় কেউ কোনও কর্মসূচি করবেন বলে বাকিরা কেন করতে পারবেন না, তা নিয়েও আদালতে প্রশ্ন তোলেন মামলাকারীদের আইনজীবী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement