Tanmoy Bhattacharya

ভদ্রমহিলার ওজন ৪০ কেজি, আমার ৮৩, কোলে বসলে সুস্থ থাকতেন? প্রশ্ন হেনস্থায় অভিযুক্ত তন্ময়ের

মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার তন্ময় ভট্টাচার্যকে তলব করেছিল বরাহনগর থানা। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার পর বাড়ি ফিরে সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:৪৮
Share:

তন্ময় ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত।

মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থার যে অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে, তা ‘পরিকল্পিত কুৎসা’ বলেই মনে করছেন তন্ময় ভট্টাচার্য। সিপিএম নেতা পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, অভিযোগকারিণী মহিলা সাংবাদিকের শরীরের ওজন ৪০ কেজি। আর তাঁর ওজন ৮৩ কেজি। তিনি মহিলা সাংবাদিকের কোলে বসে পড়েছেন বলে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা যদি সত্যি হয়, তা হলে কি ওই মহিলা সাংবাদিক সুস্থ থাকতে পারতেন?

Advertisement

হেনস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার তন্ময়কে তলব করেছিল বরাহনগর থানা। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার পর বাড়ি ফিরে সাংবাদিক বৈঠক করেন সিপিএম নেতা। তাঁর দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগই অসত্য। যে ঘটনার কথা ফেসবুক লাইভে বলা হয়েছে, তা ঘটেইনি। তন্ময় বলেন, ‘‘ভদ্রমহিলা আমার বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন আনুমানিক ১০টা ৪০ মিনিটে। আমার পাশের বাড়ির এক যুবক আমায় রাতে জানিয়েছে যে, মেয়েটি হাসতে হাসতেই বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিলেন। মেয়েটি ফেসবুক লাইভে বলেছেন যে, উনি শারীরিক এবং মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। আমার বক্তব্য হল, যে সময়ে ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে, তার পরে মেয়েটি প্রায় ২৫ মিনিট আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এর পর আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে মেয়েটির সল্টলেক যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে একটি সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা ছিল ওঁর। ওই সাক্ষাৎকার নিয়ে আমাদের দু’জনের মধ্যেও কথা হয়েছে। আমি ওঁকে একটা প্রশ্নও সাজেস্ট করে দিয়েছিলাম। যিনি এতটা ট্রমাটাইজ় (মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত) হয়ে রয়েছেন, তাঁর পক্ষে কি এত কাজ করা সম্ভব?’’

মহিলা সাংবাদিকের অভিযোগ কেন ‘অসত্য’, তা ‘প্রমাণ’ করতে গিয়ে তন্ময়ের যুক্তি, ‘‘ভদ্রমহিলার ওজন ৪০ কেজির বেশি নয়। আমার ওজন ৮৩ কেজি। ৮৩ কেজি ওজনের এক জন পুরু‌ষ মানুষ যদি ৪০ কেজি ওজনের এক মহিলার কোলে বসে পড়েন, তা হলে সেই মহিলা শারীরিক ভাবে ফিট থাকে কি না, আমি জানি না। এটা পরিকল্পিত কুৎসা।’’

Advertisement

তাঁর বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ ওঠার পরেই সিপিএম যে পদক্ষেপ করেছে, দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম যে বিবৃতি দিয়েছেন, তার সঙ্গে তিনি সহমত বলেই জানিয়েছেন তন্ময়। সাংবাদিক বৈঠকে প্রাক্তন এক সিপিএম নেতা (বর্তমানে তিনি তৃণমূলে)-র উদাহরণ টেনে তন্ময়কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনিও তৃণমূলে যোগ দেবেন কি না। জবাবে তন্ময় বলেন, ‘‘আমি আজন্ম বামপন্থী ছিলাম, আছি এবং থাকবও। এই ঘটনার জন্য আমার পার্টি যদি আমাকে দোষী বলে, তা হলেও আমি বামপন্থী থাকব। আর যদি বলে আমি নির্দোষ, আমি সিপিএম হয়েই থাকব। যদি শেষ পর্যন্ত সিপিএমে আমার থাকা না হয়, তা হলেও আমি বামপন্থী হয়েই থাকব।’’

রবিবার দুপুরে ফেসবুক লাইভে এক মহিলা সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন, সকালে তিনি তন্ময়ের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন, সেই সময় সিপিএম নেতা তাঁর কোলে বসে পড়েন। ওই ফেসবুক লাইভ বিকেলের মধ্যেই দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে। যার জেরে সিপিএমের অন্দরেও শোরগোল পড়ে। এর পরেই তন্ময়কে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করেন সেলিম। অভিযুক্ত নেতার বিরুদ্ধে দলের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি তদন্ত করবে। সেই তদন্ত যত দিন না শেষ হচ্ছে, তত দিন সাসপেন্ড থাকবেন তন্ময়।

সেলিম বলেন, ‘‘বিকেলে জানতে পেরেছি। এক মহিলা সাংবাদিক তন্ময়ের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কোন ছোঁয়া সাধারণ আর কোনটা খারাপ ভাবে ছোঁয়া, তা মেয়েরা খুব ভাল করে বুঝতে পারেন। এই ধরনের কোনও অভিযোগ এলে সিপিএম দল হিসাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখে। তন্ময় গর্হিত কাজ করেছে। তা সিপিএম দল হিসাবে কোনও ভাবেই সমর্থন করে না। কেউ এটাকে ভাল চোখে দেখবেন না। আমরা এগুলোকে ক্ষমার চোখে দেখি না।’’ সেলিমের সংযোজন, ‘‘আমাদের দলে ইন্টারনাল কমপ্লেন কমিটি রয়েছে। তার একটা পদ্ধতিও আছে। কিন্তু তার জন্য সময় লাগে। তাই তার আগেই আমরা তন্ময়কে সাসপেন্ড করব। কত দিনের, সেটা দেখতে হবে। অভ্যন্তরীণ তদন্ত কত দিনে শেষ হবে, তার উপরেই নির্ভর করছে। পরে তদন্ত কমিটি যে প্রস্তাব দেবে, সেটাকেই আমরা গ্রহণ করব।’’

রবিবার রাতেই তন্ময়ের বিরুদ্ধে বরাহনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন অভিযোগকারিণী মহিলা সাংবাদিক। তার ভিত্তিতে এফআইআর-ও হয়। এর পর সোমবারই তন্ময়কে থানায় ডেকে পাঠায় পুলিশ। তাঁকে প্রায় তিন ঘণ্টা থানায় বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement