জেনেশুনে কিছু করিনি, অনুতাপ রোহিত-সঙ্গীর

অভিনব জানতেন না, তাঁকে না-জানিয়ে রোহিত ফিরে গিয়েছেন চাকা-ঘরের কাছে। মাটিতে দাঁড়িয়ে চাকা-ঘরে মাথা ঢুকিয়ে নতুন করে কিছু একটা পরীক্ষা করছিলেন তিনি। অভিনব সুইচ অন করার সঙ্গে সঙ্গে দরজার দু’টি পাল্লা গিয়ে ঠেলে ধরে রোহিতের মাথা।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯ ০৩:৫৮
Share:

রোহিত বীরেন্দ্র পাণ্ডে। —ফাইল ছবি

তদন্তকারীদের সামনে বসে ঘটনার কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছিলেন অভিনব ঝা। হাত জোড় করে বলেছিলেন, ‘‘বিশ্বাস করুন। আমি জেনেশুনে কিছু করিনি।’’

Advertisement

স্পাইসজেটের ইঞ্জিনিয়ার অভিনব ৯ জুলাই গভীর রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে কিউ৪০০ বিমানের ককপিটে বসে ছিলেন। ককপিটে এসে জুনিয়র টেকনিশিয়ান রোহিত বীরেন্দ্র পাণ্ডে তাঁকে জানান, ‘অল ক্লিয়ার’। রোহিত বিমানের পিছনের ডান দিকের চাকা-ঘরের কাছে কাজ করছিলেন। রোহিতের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে তখনই ওই চাকা-ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলে হয়তো সমস্যা হত না। কিন্তু অন্য খুঁটিনাটি কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অভিনব। প্রায় ১০ মিনিট পরে যখন তাঁর মনে পড়ে, তখন ককপিটে সুইচ টিপে চাকা-ঘরের দরজা বন্ধ করেন।

অভিনব জানতেন না, তাঁকে না-জানিয়ে রোহিত ফিরে গিয়েছেন চাকা-ঘরের কাছে। মাটিতে দাঁড়িয়ে চাকা-ঘরে মাথা ঢুকিয়ে নতুন করে কিছু একটা পরীক্ষা করছিলেন তিনি। অভিনব সুইচ অন করার সঙ্গে সঙ্গে দরজার দু’টি পাল্লা গিয়ে ঠেলে ধরে রোহিতের মাথা। ঘটনাস্থলেই মারা যান ২২ বছরের রোহিত। তাঁরই সুইচ টেপার জন্য একটি তরতাজা যুবকের মৃত্যু— মেনে নিতে পারছেন না অভিনব। মধ্য তিরিশের এই ইঞ্জিনিয়ার সেই থেকে অনুশোচনায় দগ্ধে মরছেন। প্রতি মুহূর্ত তাঁকে তাড়া করছে দুঃস্বপ্ন। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আপাতত ছুটি নিয়ে চলে গিয়েছেন ধানবাদে, ‘দেশের’ বাড়িতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, উড়ান সংস্থা তাঁকে সাসপেন্ড করেছে।

Advertisement

প্রাথমিক তদন্ত শেষ করে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর অফিসারেরা প্রশ্ন তুলেছেন, ১০ মিনিট পরে যখন চাকা-ঘরের দরজা বন্ধ করলেন, তখন আরও এক বার কেন সেই ঘর দেখে নিলেন না অভিনব? অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার থাকলে তার অন্যথা হত না বলে মনে করেন তদন্তকারীরা। এই কারণে অভিনবের কোনও শাস্তি হবে কি না, তা এখনও ঠিক হয়নি। তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট সবে জমা পড়েছে দিল্লিতে।

তবে তদন্তকারীদের দিক থেকেই অভিনবের অনুকূলে জোরালো যুক্তি দেখানো হয়েছে। ডিজিসিএ সূত্রের খবর, সে-রাতে মোট ন’টি বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল অভিনবের উপরে। অভিনব এবং অন্য ইঞ্জিনিয়ারেরা পাঁচটি বড় বোয়িং এবং চারটি ছোট কিউ৪০০ বিমান রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছিলেন। ‘‘এর ফলে ক্লান্তি আসতে বাধ্য। রাত প্রায় দেড়টা নাগাদ যখন রোহিতের

দুর্ঘটনা ঘটে, তত ক্ষণে অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন ইঞ্জিনিয়ারেরা। যতটা সজাগ থাকলে দ্বিতীয় বার চাকা-ঘর পরীক্ষা করে দরজা বন্ধ করার কথা, ক্লান্তির জন্য তার অভাব দেখা দিতে বাধ্য,’’ বলছেন ডিজিসিএ-র এক কর্তা। এই ক্লান্তির কারণে কড়া শাস্তি এড়াতে পারেন অভিনব।

অভিযোগ উঠেছে, লোকসান কমাতে এবং মুনাফার আশায় বেশির ভাগ উড়ান সংস্থাই তুলনায় অনেক কম কর্মী নিয়ে কাজ চালাচ্ছে। এক-এক জনকে দিয়ে তুলনায় অনেক বেশি কাজ করানো হচ্ছে। পরিণামে ৯ জুলাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে। জেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে খুব কম সময়ের মধ্যে তাদের কাছ থেকে প্রায় ৩০টি বিমান নিয়ে নিয়েছে স্পাইসজেট। অথচ সেই অনুপাতে কর্মী বাড়ানো হয়নি বলে অভিযোগ।

ডিজিসিএ-কর্তাদের মতে, ক্লান্তির মোকাবিলায় পাইলটদের যেমন ডিউটি সময় বেঁধে দেওয়া আছে, ইঞ্জিনিয়ারদের ক্ষেত্রেও সেটা করা উচিত। রোহিতের মৃত্যুর তদন্ত শেষে ডিজিসিএ সেই নির্দেশের পথে হাঁটতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement