সাগরে যাওয়ার জন্য আট নম্বর লটের ঘাটে ভেসেলে ওঠার ভিড়। রবিবার। নিজস্ব চিত্র।
রবিবার সকাল ৮টাতেই কাকদ্বীপের লট ৮ ঘাটে কয়েকশো মানুষের ভিড়। ভেসেলে নদী পেরিয়ে কচুবেড়িয়া হয়ে গঙ্গাসাগরে যাবেন সবাই। ঘাটে ভেসেল পৌঁছতেই শুরু হল ঠেলাঠেলি-ধাক্কাধাক্কি করে জায়গা পাওয়ার লড়াই। ভিড়ের চাপে গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকতে না পেরে লাফিয়ে রেলিং টপকে ভেসেলে উঠলেন অনেকে। হুড়োহুড়িতে শিকেয় উঠল দূরত্ব-বিধি। কিছু ক্ষণ পরে যখন ভেসেল ছাড়ল, তখন সেখানে তিল ধারণের জায়গাও নেই। পুণ্যার্থীরা কার্যত একে অন্যের গায়ের উপরে চড়ে যাত্রা করলেন। মেলায় ৫০ জনের বেশি জমায়েত না করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কিন্তু ভেসেলের ভিড়ে উড়ে গেল সেই নিয়ম।
২৪ ঘণ্টা আগেই, শনিবার ভেসেল-ঘাট থেকে শুরু করে মন্দির চত্বর, সর্বত্রই বিধি মানতে প্রশাসনের কড়াকড়ি চোখে পড়েছিল। কিন্তু রবিবার দিনভরই বিধি ভাঙার ছবি সামনে এসেছে। সমুদ্রে নেমে স্নান করার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে এ দিন বহু মানুষকে সমু্দ্রে স্নান করতেও দেখা যায়।
সাগরে কপিলমুনির মন্দিরে ঢোকার মুখে গাদাগাদি ভিড়। ছবি সুমন বল্লভ।
প্রশাসনের তরফে কার্যত কোনও নজরদারিই এ দিন চোখে পড়েনি। সকালে লট ৮ ঘাটে কয়েক জন স্বেচ্ছাসেবককে পুণ্যার্থীদের টিকাকরণের কাগজপত্র পরীক্ষা করতে দেখা যায়। কিন্তু ভিড় নিয়ন্ত্রণে কেউ এগিয়ে আসেননি। শনিবার মন্দিরে ঢোকার আগে পুণ্যার্থীদের দেহের তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ দিন তা-ও দেখা যায়নি। আগের দিন প্রশাসনের তরফে মাস্ক বিলি করা হয়। এ দিন তা হয়নি। পুলিশকর্মীরা থাকলেও, সমুদ্রে নামতে কেউ বাধা দেননি এ দিন।
পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণ নিগম সূত্রের খবর, ২৪ ঘণ্টায় কচুবেড়িয়া ভেসেল ঘাট থেকে প্রায় ১৫ হাজার পুণ্যার্থী গঙ্গাসাগরে পৌঁছেছেন। নামখানার নারায়ণপুর থেকে লঞ্চে করে বেণুবন হয়ে আরও প্রায় চার হাজার পুণ্যার্থী এসেছেন। মকর সংক্রান্তির এখনও বাকি কয়েক দিন। সে দিনই সাগরে সবচেয়ে বেশি জনসমাগম হয়। এখনই বিধি ভেঙে এত ভিড় হলে, দিন কয়েক পরে কী হবে, তা ভেবেই আতঙ্কিত স্থানীয়দের একাংশ। প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে সুন্দরবন পুলিশ জেলার ৩১ জন পুলিশকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কাকদ্বীপ মহকুমায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও আক্রান্ত বাড়ছে। ব্লক-মহকুমা হাসপাতাল মিলিয়ে একের পর এক চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক আরও বাড়ছে।
এর মধ্যেই রবিবার থেকে স্বাস্থ্য দফতর ও একটি বেসরকারি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে মেলা প্রাঙ্গণে খোলা হয়েছে ২১টি ‘মেগা ভ্যাকসিনেশন বুথ’। মেলা চত্বর জুড়ে এ দিন থেকে আরটিপিসিআর পরীক্ষাও শুরু হয়েছে। এ দিন ৯৭ জনের পরীক্ষা হয়েছে। তবে কারও করোনা ধরা পড়েনি বলে জানিয়েছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, মেলা প্রাঙ্গণে ৫৫ শয্যার অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। রয়েছে ৫টি সিসিইউ ও ৫টি আইসিইউ। সেখানে পরিষেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা আছেন। অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও আলাদা করে কোয়রান্টিন সেন্টার ও সেফ হোম খোলা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।