—ফাইল চিত্র।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে কৃষি-সহ নানা ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন যাচাই করে তবেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে বলে রাজ্য সরকারের দাবি। কিন্তু কৃষি ক্ষেত্রে যে-ভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, তার যৌক্তিকতা ও বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছেন অর্থনীতিবিদ প্রসেনজিৎ বসু। তিনি একটি যুব সংগঠনের নেতাও। এর আগে ঘূর্ণিঝড় আমপানে বিধ্বস্ত এলাকায় ক্ষতিপূরণের সময়েও কৃষকবন্ধু প্রকল্পের বিষয়ে মামলা করেছিলেন তিনি। এ বারের মামলায় বিশেষত কৃষি ক্ষেত্রের ক্ষতিপূরণের কয়েকটি দিক তুলে ধরা হয়েছে।
সোমবার মামলাটি হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে শুনানির জন্য ওঠে। তবে মামলাকারীর আইনজীবীর অনুরোধে তার শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়। কাল, বুধবার মামলাটির ফের শুনানি হওয়ার কথা।
প্রসেনজিৎবাবু জানান, ইয়াসের ক্ষেত্রে ক্ষতির ধরন অনুযায়ী এক হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ ধার্য করেছে সরকার। কিন্তু এ ভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। তাঁর বক্তব্য, এ রাজ্যে জমির মালিক ছাড়াও প্রচুর ভাগচাষি আছেন। কিন্তু জমির মালিক না ভাগচাষি, কে ক্ষতিপূরণ পাবেন— তার কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশ নেই। কৃষি ক্ষেত্রে ফসল-ভেদে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হয় আলাদা আলাদা। সেই ধরনের কোনও সমীক্ষা না-করেই রাজ্য সরকার নিজেদের সুবিধামতো একতরফা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। ধানের ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ ও ধরন যেমন, আনাজের ক্ষেত্রে তা নয়। উপরন্তু, ইয়াসের ক্ষেত্রে সমুদ্রের নোনা জল ঢুকে চাষের জমি লবণাক্ত করে তুলেছে। সেই জল বার করা এবং জমির নোনা ভাব দূর করার কাজ ক্ষতিপূরণের সামান্য টাকায় মোটেই হবে না। একই ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যে-বিভাজন করা হচ্ছে, তা সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারার পরিপন্থী বলেও মামলায় জানানো হয়েছে।
আবেদনকারীর বক্তব্য, তাঁরা ক্ষতিপূরণের বিরোধী নন, ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়ার উপরে স্থগিতাদেশও চান না। আদালতের কাছে তাঁর আর্জি, কৃষি ক্ষেত্রে উপযোগী ক্ষতিপূরণের জন্য রাজ্য সরকারকে পৃথক এবং নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে যথাযথ উপায়ে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হোক।
সরকারের তরফে এই বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে কৃষি দফতর সূত্রের বক্তব্য, ইয়াসের পরে কৃষকদের যে-আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে, তাকে ক্ষতিপূরণ বলা ঠিক হবে না। বরং তাকে পরবর্তী চাষের আগে আর্থিক সহায়তা হিসেবে দেখাই বাঞ্ছনীয়।
সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে, চাষের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেবে মূলত বিমা সংস্থাগুলি। তাদের নিজস্ব পদ্ধতি শেষ করার পরে ক্ষতিপূরণ পাবেন বিমার আওতায় থাকা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা। এই পদ্ধতি যাতে দ্রুত শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্য। অন্য দিকে, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিজমির ক্ষতির মূল্যায়নে সরকারের মৌজা-ভিত্তিক একটি পদ্ধতি রয়েছে। কোনও মৌজায় কৃষিজমির ৩৩% বা তার বেশি জমির ক্ষতি হলে সংশ্লিষ্ট এলাকাকে ‘নোটিফাই’ বা বিজ্ঞাপিত করা হয়। তার ভিত্তিতে পরবর্তী চাষের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছে সরকার। “রাজ্যের বেশির ভাগ কৃষকই ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক। তাঁদের পরবর্তী চাষের আগে কিছুটা সুবিধা দিতেই রাজ্য সরকার আর্থিক সহায়তা দিয়েছে,” বলেন এক প্রশাসনিক কর্তা। সরকারি সূত্রের খবর, ফসল বা চাষের জমি নষ্ট হওয়ায় অন্তত ১৬.৮ লক্ষ কৃষককে প্রায় ২৪০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আরও খবর, দুয়ারে ত্রাণে যে সব যোগ্য উপভোক্তার ক্ষতিপূরণ পাওয়া বাকি রয়েছে, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দ্রুত টাকা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। আগামী শুক্রবারের মধ্যে এই কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে বলে খবর।