purulia

হুইলচেয়ার ঠেললেন মমতা, উজ্জীবিত চন্দন

পুরুলিয়া জেলা জনশিক্ষা প্রসার দফতরের আধিকারিক সুমন চট্টোপাধ্যায় জানান, ৪০ শতাংশের বেশি প্রতিবন্ধী হলেই এই বৃত্তি পাওয়া যায়। ওই গবেষক ছাত্রটি ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী।

Advertisement

প্রশান্ত পাল 

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:৪৪
Share:

মমতার মঞ্চে চন্দন। নিজস্ব চিত্র

হাঁটাচলার শক্তি হারিয়েছেন অনেকদিন। কিন্তু উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন হারাননি। হুইল চেয়ারকে সঙ্গী করেই পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় পিএউচ ডি করছেন কাশীপুর ব্লকের টাড়া গ্রামের বাসিন্দা চন্দন বাউরি। চন্দনের শিখর ছোঁয়ার স্বপ্নকে উৎসাহ দিতে বৃহস্পতিবার হুটমুড়ার সভা মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর হাতে জনশিক্ষা প্রসার দফতরের বৃত্তির (স্কলারশিপ) চেক তুলে দিলেন।

Advertisement

পুরুলিয়া জেলা জনশিক্ষা প্রসার দফতরের আধিকারিক সুমন চট্টোপাধ্যায় জানান, ৪০ শতাংশের বেশি প্রতিবন্ধী হলেই এই বৃত্তি পাওয়া যায়। ওই গবেষক ছাত্রটি ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। আবেদনের প্রেক্ষিতে তাঁকে বই কেনার জন্য ও বৃত্তি হিসেবে দফতরের তরফে তিন লক্ষ দু’হাজার টাকা দেওয়া হল।

বাংলা সাহিত্যের ছাত্র চন্দনের গবেষণার বিষয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যে বিশেষ ভাবে চাহিদা সম্পন্নদের জীবন-সংগ্রাম। তবে ছোট থেকে চন্দনের কোনওরকম প্রতিবন্ধকতা ছিল না। মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত সাইকেলে স্কুলে গিয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কোমরে ও পিঠে যন্ত্রণা শুরু হয়। যা ধীরে ধীরে তাঁর হাঁটাচলার শক্তি কেড়ে নেয়। দিনমজুর পরিবারের চন্দন ঋণ করে পরে দক্ষিণ ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে জানতে পারেন, ‘বোন টিবি’-তে তিনি আক্রান্ত।

Advertisement

চন্দনের পড়ার অদম্য ইচ্ছা দেখে ভাই অঞ্জন তাঁকে সাইকেলে কলেজে নিয়ে যেতে থাকেন। পাশাপাশি তিনি নিজের পড়াশোনাও চালিয়ে যান। পরে চন্দন পুরুলিয়ায় স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা করতে এলে অঞ্জন তাঁর সঙ্গী হন। দাদার স্বপ্ন পূরণের লড়াইয়ে তাঁর চেষ্টাও কম নেই।

অঞ্জন বলেন, ‘‘দাদা ও আমি একই সঙ্গে শিক্ষক শিক্ষণ পাঠক্রমে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। দু’ভাই টিউশন পড়িয়ে খরচ জোগাড় করতাম।’’ তাঁরা এ বার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের টেট পাশ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর হাতে বৃত্তির চেক তুলে দিয়ে হুইল চেয়ার নিজে ঠেলে দেওয়ায় আপ্লুত চন্দন। তিনি বলেন, ‘‘এখনও যেন ঘোর কাটছে না। মুখ্যমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, ‘লড়াই করে এগিয়ে যাও’। আর পিছনে ফিরে তাকানোর প্রশ্নই নেই। তবে একটা কাজে যুক্ত হয়ে গেলে লড়াইটা কিছুটা সহজ হত।’’

পুরুলিয়া সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ডিন নাড়ুগোপাল দে বলেন, ‘‘আমি আগে কাশীপুর কলেজে ছিলাম। তখন থেকে চন্দনের লড়াই দেখে যাচ্ছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement