অমিত শাহ। — ফাইল চিত্র।
ওঁরা বৌদ্ধ। উদ্বাস্তু হয়ে এ দেশে এসেছেন বহু দিন। কিন্তু নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ওঁদের নিয়ে কিছু বলেনি। কারণ, ওঁরা পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা বাংলাদেশ থেকে আসেননি। এসেছেন চিন নিয়ন্ত্রিত তিব্বত থেকে। চিন্তায় রয়েছেন ওঁদের সে পড়শিরাও, যাঁরা নেপাল, ভুটান থেকে বিভিন্ন সময়ে এসে এ দেশে বসবাস করছেন বহু দিন। সিএএ ঘোষণার পরে, এ রাজ্যের পাহাড় এবং লাগোয়া সিকিমের অনেকেরই প্রশ্ন, যদি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আগেকার দাবি অনুযায়ী, সিএএ-র পরে এনআরসি (নাগরিকপঞ্জি) বলবৎ করা হয়, তা হলে তাঁরা কোথায় যাবেন! পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে পাহাড়ের রাজনৈতিক দলগুলিও।
প্রশাসনের একটি সূত্র অবশ্য বলছে, পুরনো নাগরিকত্ব আইন তো এখনও বলবৎ আছে। তাঁরা তাতে আবেদন করতেই পারেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, জিটিএ-র অন্তর্গত দার্জিলিং এবং কালিম্পং পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা মিলিয়ে গত ২০১৫ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রক একটি জন্ম এবং জন্মের শংসাপত্র সংক্রান্ত সমীক্ষা চালিয়েছিল। তাতে দেখা যায়, এলাকার ২৮-৩০ শতাংশ মানুষের জন্মের নথিপত্র নেই। একাংশের শংসাপত্র তো দূর, বাবা-মা’র জন্মস্থান, তারিখও জানা নেই।
জিটিএ-র আধিকারিকদের একাংশের দাবি, চিনের তাড়া খেয়ে ১৯৫০ সাল থেকে দলাই লামার অনুগামী তিব্বতের বহু বাসিন্দা পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমের পাহাড়েও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। দার্জিলিং, কালিম্পং থেকে সিকিমের লাচুং, লাচেনের নানা দিকে তাঁদের বাস। কেউ দিনমজুর, কেউ গাড়িচালক, কেউ চালান ‘হোম-স্টে’। তিব্বতিরা শরণার্থী হিসাবেই থেকে গিয়েছেন। কালিম্পঙের আলগাড়ার বাসিন্দা, তিব্বত থেকে আসা এক উদ্বাস্তু
বলেন, ‘‘সিএএ-র পরে, এনআরসি আসবে মনে হচ্ছে৷ দু’দশকের কালিম্পং ছেড়ে না যেতে হয়! দিন দিন আতঙ্ক বাড়ছে।’’
তেমনই ভুটান থেকে আসা অনেকেও এ দেশে কয়েক দশক ধরে বসবাস করেন। তাঁরা বিভিন্ন ব্যবসাও করছেন। পুরনো নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, তাঁরা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারেন। তবে তাঁদের কী হতে পারে, বলা নেই সিএএ-তে। দার্জিলিং এবং কালিম্পং পাহাড়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে নেপালের চিরাচরিত সম্পর্ক থাকলেও, নতুন আইনে সেখান থেকে আসা বাসিন্দাদের সম্পর্কেও উল্লেখ নেই। উদ্বেগ রয়েছে তাঁদেরও। চম্পাসারির বাসিন্দা এক ভুটানি মহিলা, পেশায় কাপড়ের ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘বহু বছর এখানে আছি। ভোটার কার্ড আছে। এ বার সিএএ-তে কী হবে জানি না! ভয়ে আছি।’’ প্রশাসন সূত্রের দাবি, নেপাল ও ভুটানের লোকজন দু’দেশেই যাতায়াত করেন৷ ব্যবসা ও নানা কাজ করেন। অনেকে এ দেশের ভোটার কার্ড, আধার কার্ডের মতো একাধিক নথিপত্র বেআইনি ভাবে করিয়েছেন বলে অভিযোগ৷ কিন্তু সে সব ধরা পড়ার ভয়ে নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করেননি৷
জিটিএ প্রধান অনীত থাপা বলেন, ‘‘আমরা সিএএ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি, নির্দেশিকা এবং নথিপত্র ভাল করে খতিয়ে দেখছি। পাহাড়ে থাকা মানুষের বিপক্ষে বা তাঁদের বিপদে ফেলার কিছু হলে, আমরা প্রতিবাদ করবই।’’
২০১৯ সালে অসমে এনআরসি বলবৎ হওয়ার পরে, সেখানে গিয়েছিলেন বর্তমানে প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিনয় তামাং। তাঁর দাবি, ‘‘অসমে এনআরসির সময়ে বাদ পড়া লোকজনের মধ্যে দেড় লক্ষ গোর্খা ছিলেন। পাহাড়বাসী সেটা দেখেছেন। এখানে এনআরসি হলে নেপাল, ভুটান থেকে আসা লোকজন বা তিব্বতিদের কী হবে, তা ভেবে আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ, বিজেপি ফের ক্ষমতায় এলে এনআরসি করবেই।’’ যদিও বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা থেকে পাহাড়ের বিজেপি নেতারা বলছেন, ‘‘ভোটের আগে পুরোটাই বিরোধীদের অপপ্রচার।’’