Al-Qaeda

আল কায়দার নামই শোনেননি আম্বিয়া বিবি

মোশারফের বাবা তজিমুদ্দিন মণ্ডল উঠোনের এক কোণে বসে বলে চলেছেন, ‘‘দু-দুটো ছেলেকে ধরে নিয়ে গেল, অথচ কী যে তাদের গুনা (দোষ) জানতেই পারলাম না!’’

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস 

জলঙ্গি শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৫২
Share:

প্রতীকী ছবি।

টিনের চাল, দরমার বেড়ার ফাঁক গলে রোদ-হাওয়ার অনায়াস চলাচল। জল-কাদায় মাখামাখি উঠোন। মোশারফ হোসেনের এক চিলতে গ্রামীণ ঠিকানার সামনে ছোট্ট জটলা।

Advertisement

কথা বলার জন্য দু’পা এগোতেই পাঁচ পা পিছিয়ে যাচ্ছেন পড়শি, ‘না ভাই, এ বার আমি কথা বলেছি বলেও যদি ধরে!’ তাঁর কথায় স্পষ্ট টিপ্পনী। শুক্রবার রাতভর এনআইএ-র তল্লাশি শেষে মোশারফের ভাই আতিউরকেও কলার ধরে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা। দাদা মোশারফ ধরা পড়েছে কেরলের এর্নাকুলামে।

মোশারফের বাবা তজিমুদ্দিন মণ্ডল উঠোনের এক কোণে বসে বলে চলেছেন, ‘‘দু-দুটো ছেলেকে ধরে নিয়ে গেল, অথচ কী যে তাদের গুনা (দোষ) জানতেই পারলাম না!’’ মোশারফেরা সাত ভাই। ছোট ভাই আতাউর এখনও কলেজ পড়ুয়া। তার পড়াশোনার যাবতীয় খরচ জোগাত কেরল প্রবাসী দাদা মোশারফ। তজিমুদ্দিনের সেজ ছেলে আসিফ আহমেদ বলছেন, ‘‘দাদার ঘরেই আতিউর থাকত। সেই ঘরের সব কাগজপত্র তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক কাগজ নিয়ে গিয়েছে পুলিশ (এনআইএ)। খাতা, ডায়েরির পাতাগুলো এক্কেবারে ছিঁড়ে ফেলছে।’’ তবে এনআইএ-র এক কর্তা জানালেন, ওই কাগজের স্তূপেই দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যাওয়া স্বঘোষিত ধর্মগুরু জাকির নায়েকের বইও মিলেছে। আতিউরকে গ্রেফতারের সেটাও একটা কারণ বলে স্থানীয় পুলিশের অনুমান।

Advertisement

লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ঢল নামলেও মোশারফের মতো কেরল থেকে গ্রামে আর ফেরা হয়নি জলঙ্গির মধুবোনা গ্রামের ইয়াকুব বিশ্বাসের। তার বাড়ির লোকজন জানান, এর্নাকুলামের একটি দোকানে লুচি ভাজার কাজ করত ইয়াকুব। জমি-জায়গা তেমন নেই। তার অন্য ভাই রুবেলও পরিযায়ী, কেরলের অন্য এক শহরে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। দুই ভাইয়ের টাকাতেই সংসারে চাল-নুনের সংস্থান। সদ্য বিয়ে হয়েছে ইয়াকুবের। তার বছর খানেকের ছেলে বাবা গ্রেফতার হওয়ার আঁচটুকুও পায়নি। উঠোনময় হামাগুড়ি দিয়ে বেড়াচ্ছে সে। ইয়াকুবের মা আমিনা বিবি বলছেন, ‘‘ছেলেদের পাঠানো টাকায় পরিবারটা চলে। ইয়াকুব ছাড়া না-পেলে রুবেল একা আর ক’টাকা পাঠাবে। সংসারটা ভেসেই গেল গো!’’

মাস আটেক আগে কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ নিয়ে এই প্রথম পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ঘর ছেড়েছিল মুর্শিদ। পাড়া-পড়শিরা জানান, মুর্শিদ স্কুলের নিচু ক্লাসেই পড়া ছেড়ে দিয়েছিল। তার মা আম্বিয়া বিবি বলেন, ‘‘সকালে পুকুর পাড়ে গিয়েছি, পাড়ার কয়েকটা কচিকাঁচা ছুটে এসে খবর দিল, চাচি তোমার ছেলেকে টিভিতে দেখাচ্ছে।’’ হতভম্ব আম্বিয়া ভেবেছিলেন, ছেলে মুর্শিদের বুঝি কোনও দুর্ঘটনা হয়েছে। পাশের বাড়িতে ছুটে গিয়ে দেখেন, জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর ছেলেকে। যে জঙ্গি সংগঠনের কথা বলা হচ্ছে, সেই আল কায়দার নামই কোনও দিন আম্বিয়া শোনেননি। লকডাউনের পর থেকে ছেলে কী ভাবে রয়েছে, তা নিয়েই দিনরাত চিন্তায় থাকতেন আম্বিয়া। বলছেন, ‘‘কী যে হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারি না। এমন নিরীহ ছেলে, সে নাকি জঙ্গি!’’

আরও পড়ুন: ‘পড়াশোনা নিয়ে কথা হত দুই বন্ধুর’

আরও পড়ুন: ডার্ক ওয়েবে বিনিময় বার্তা, চাঁই পাকিস্তানে

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement