কৃষ্ণনগরের পথে সাঙে জগদ্ধাত্রী। রবিবার রাতে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
বৃষ্টিবিঘ্নিত রাতে বেহারার কাঁধে জগদ্ধাত্রী প্রতিমা ফিরল কৃষ্ণনগরের পথে। কিন্তু করোনাকালে প্রশাসনের শর্ত কতটা মানা হল, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
রবিবার রাতে প্রথম দিকে তুলনায় যে ছোট প্রতিমাগুলি বেরিয়েছে, বেহারা ঢাকি পুজো কমিটির লোক মিলে সেগুলি পুলিশের বেঁধে দেওয়া গণ্ডিতে আবদ্ধ ছিল কি না, তা পুলিশই বলতে পারবে। তবে গভীর রাতে বৃহদাকার প্রতিমাগুলি সাঙে নিয়ে যাওয়ার সময়ে কী হতে পারে, তার পূর্বাভাস তখনই মিলেছে।
করোনার কারণে গত বছর বেহারাবাহিত বাঁশের মাচায় বা ‘সাঙে’ বিসর্জনে নিষেধ ছিল, চাকা লাগানো গাড়িতে বিসর্জন করায় পুলিশ। এ বার হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সাং নিয়ে পূর্ণাবয়ব শোভাযাত্রী করা চলবে না। তবে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদন সাপেক্ষে ‘প্রতীকী শোভাযাত্রা’ করা যাবে। পুলিশ শর্ত দেয়, বেহারা, ঢাকি ও পুজো কমিটির লোক নিয়ে সর্বাধিক ৫০ জন একটি শোভাযাত্রায় যেতে পারবে। যদিও বড় পুজোলির প্রতিমা কাঁধে তুলতেই ১০০-১৫০ বেহারার প্রয়োজন হয়। এই নিয়ে পুজোকর্তারা আপত্তি জানালেও পুলিশ কর্ণপাত করেনি। শেষে ওই বিধি মানার শর্তেই সাঙের অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন।
সাঙে প্রতিমা বিসর্জন কৃষ্ণনগর তথা নদিয়ার পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী পুজোগুলির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের প্রথা। এই নিয়ে শহরের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের ‘আবেগ’ রয়েছে। গত বার জনসমাবেশ এড়াতে সাং নিষিদ্ধ করা হলেও বিসর্জনের রাতের হাজার-হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন। এ বার বেশ কিছু দিন আগে থেকেই সাঙের দাবি দানা বাঁধছিল। গত ৯ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে শহরের কেন্দ্রে বিক্ষোভ-অবরোধ শুরু হয়, পরে থানা ঘেরাও হয়ে যা পৌঁছয় ৩৪ নম্বর জাতীয় অবরোধে। মাঝরাতে সেই অবরোধে আটকে পড়া অ্যান্বুল্যান্সেই মারা যায় মালদহ থেকে কলকাতার হাসপাতালের দিকে রওনা দেওয়া এক বালক। পাঁচ জন গ্রেফতার হয়।
কৃষ্ণনগরের কয়েকটি বারোয়ারির তরফে হাইকোর্টে সাঙে শোভাযাত্রার আর্জি জানানো হয়েছিল। রাজ্যের তরফে এর বিরোধিতা করা হলেও গত ১১ নভেম্বর হাই কোর্ট প্রশাসনের আগাম অনুমোদন সাপেক্ষে ‘প্রতীকী’ শোভাযাত্রার নির্দেশ দেয়। রবিবার দিনভর দফায়-দফায় বৃষ্টির জেরে পথে এবং পথের দু’ধারে ভিড় অন্য বারের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। রাতেও কয়েক বার জোরে বৃষ্টি নেমেছে। কিন্তু রাতভর সাঙের শোভাযাত্রা সত্যিই কতটা ‘প্রতীকী’ রইল আর কতটা ছাপিয়ে গেল যাবতীয় নিষেধের গণ্ডি, তার হিসেব হবে রাত পোহালে।