প্লাবিত বালুরঘাটের কালিকাপুর ডাকরা এলাকা। ছবি: অমিত মোহান্ত।
চার দিন ধরে ত্রাণ না পেয়ে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের দুই সঙ্গীকে থানার সামনে ধরে এনে পেটালো একদল বন্যার্ত মানুষ। শুক্রবার দুপুরে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের প্রশাসনিক ভবন সামনে থানা এলাকার ঘটনা। চকভৃগু অঞ্চলের চকচন্দন এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য নন্দকিশোর মজুমদার, গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য নিখিল সরেনের দুই সঙ্গী ভোলা ও শৈলেন মাহাতোকে সরোজ সেতুর উপর পেয়ে তাদের কলার চেপে ধরে থানার সামনে নিয়ে গিয়ে কিল চড় মারতে থাকেন। পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে থানার ভিতরে নিয়ে বসিয়ে রাখে। বানভাসিদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত সদস্যদের ওই দুই সাগরেদ ত্রাণের ত্রিপল বিলি না করে আত্মসাৎ করছেন। অভিযোগ অস্বীকার করছেন প্রহৃত শৈলেনবাবুরা।
তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য নিখিল সরেনের দাবি, ‘‘মাত্র ৩০টি পলিথিনশিট পেয়েছি। কাকে ছেড়ে কাকে দেব?’’ তবে চকভৃগুর প্রত্যন্ত চকচন্দন, গোবিন্দপুর, ময়াবাড়ি এলাকার বানভাসিদের একাংশের অভিযোগ, চার দিনে মাত্র একবার খিচুড়ি ও সামান্য চিড়ে মিলেছে। বৃষ্টি বন্যাতে খড়ের ছাদ ফুটো হয়ে গিয়েছে। কোনও ত্রিপল মেলেনি। বাসিন্দারা খোঁজ করতে দেখেন অভিযুক্ত শৈলেনবাবুর বাড়ির ছাদে খড়ের গাদায় বেশ কিছু পলিথিনশীন লুকনো রয়েছে। এরপরই বাসিন্দারা তাদের টানতে টানতে থানার সামনে এনে মারধর করেন বলে অভিযোগ।
এ দিন কুমারগঞ্জের বিডিও অফিসে ত্রাণের দাবিতে মহিলারা বিক্ষোভ দেখান। বালুরঘাটের আরএসপি বিধায়ক বিশ্বনাথ চৌধুরী প্রশ্ন তোলেন, ত্রাণ সামগ্রী যাচ্ছে কোথায়? জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় দু’দফায় প্রায় ৬০ হাজার পলিথিনশিট মিলেছে। চাল পাওয়া গিয়েছে প্রায় ৬০০ মেট্রিক টন। বালুরঘাট শহরেও জল কমেছে।
দিন যত বাড়ছে, ত্রাণ নিয়ে ততই হাহাকার দেখা দিচ্ছে মালদহ জেলার বন্যা কবলিত এলাকাগুলিতেও। ১১৬টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। তারমধ্যে ৩৯টিতে রান্না করে খাওয়ার দেওয়া হচ্ছে। বানভাসি মানুষদের উদ্ধারের জন্য নামানো হয়েছে ৯১টি নৌকা এবং ৩৫টি স্পিড বোট। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, ২৯২ কুইন্টাল চিড়ে, ২৬ কুইন্টাল গুড়, ১১ হাজার ১৮৯টি বেবি ফুড, কেরোসিন তেল ১৫ হাজার ২০০ লিটার করে ছাড়া হয়েছে। তবুও ত্রাণ নিয়ে সর্বত্রই ক্ষোভ জমেছে। বৃহস্পতিবার গাজলের চাকনগর গ্রামপঞ্চায়েতের পুর্ব সুন্দরপুর ত্রাণ দিতে গিয়ে রাত ১১টা পর্যন্ত একটি স্কুল ঘরে প্রধান চম্পা রায় মজুমদার সহ প্রশাসনের কর্মীদের তালাবন্দি করে রাখা হয়। পরে জেলা শাসকের নির্দেশে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। ত্রাণ দিতে গিয়ে হেনস্থার মুখে পড়েন মালতীপুরের বিধায়ক আলবেরুণী জুলকারনাইন। ধাক্কাধাক্কি করা হয় বলে অভিযোগ।