প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ছবি পিটিআই।
দায়িত্ব নেওয়ার ঠিক এক মাসের মাথায় কাল, শুক্রবার দলের প্রথম সারির পাঁচ নেতাকে নিয়ে কলকাতায় বৈঠক ডাকলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বৈঠকের পর দিন শহরে কংগ্রেসের মিছিলও হবে তাঁর নেতৃত্বে। প্রদেশ সভাপতি হিসেবে সে দিনই প্রথম দলের মিছিলে অধীরবাবুকে দেখা যাওয়ার কথা।
বিধান ভবনে কাল বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, বিরোধী দলের সচেতক মনোজ চক্রবর্তী, পরিষদীয় দলের উপনেতা নেপাল মাহাতো এবং বিধায়ক তথা উত্তরবঙ্গের নেতা শঙ্কর মালাকারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান প্রদেশ সভাপতি। পর দিন, শনিবার বিকালে বিধান ভবন থেকেই ধর্মতলা পর্যন্ত অধীরবাবুর নেতৃত্বে মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে মূল্যবৃদ্ধি, করোনা পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, বিদ্যুতের অস্বাভাবিক দাম, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ এবং বেড়ে চলা বেকারত্বের প্রতিবাদে। যে প্রতিবাদের মূল লক্ষ্য রাজ্য সরকার। বিরোধী দলনেতা মান্নান অবশ্য প্রদেশ সভাপতিকে অনুরোধ করেছেন, বৈঠকের সময় কিছুটা পরিবর্তন করলে তিনি যোগ দিতে পারবেন। কারণ, কাল হুগলির তেলিনীপাড়ায় পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে মান্নানের যোগ দেওয়ার কথা।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, বামেদের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি এবং জোটের আসন ভাগাভাগির বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস কী চায়, তার রূপরেখা ঠিক হতে পারে কালকের বৈঠকে। প্রয়াত সোমেন মিত্রের জায়গায় অধীরবাবু প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যভার নিয়েছিলেন গত ১০ সেপ্টেম্বর। কিন্তু লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা হিসেবে দিল্লিতে তিনি ব্যস্ত থাকায় এই এক মাসে বারদুয়েক ভিডিয়ো কনফারেন্স ছাড়া প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে নতুন সভাপতির সে ভাবে আলোচনা হয়নি। বামেদের তরফে বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রেরা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে আলোচনার অপেক্ষায় রয়েছেন, কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ কিছু প্রশ্নেরও মীমাংসার দরকার রয়েছে। প্রদেশ সভাপতির ঘোষিত কমিটির তরফে মান্নান ও প্রদীপবাবু ইতিমধ্যে বিমানবাবুদের সঙ্গে একপ্রস্ত কথা বলে যৌথ কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন। যে কর্মসূচিতে মঙ্গলবার ভিড় হয়েছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু কংগ্রেসের অন্দরেই মান্নান, প্রদীপবাবুদের সেই উদ্যোগ নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অধীরবাবুর মুখোমুখি হয়ে তাই বাকি নেতারা দলের মনোভাব এবং নিজেদের দায়িত্ব স্পষ্ট করে বুঝে নিতে চান।
মান্নান ও প্রদীপবাবুর যুক্তি, বামেদের সঙ্গে ঠিকমতো জোট করে এগোতে পারলে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোটের ফায়দা তাঁরা নিতে পারবেন। কিন্তু জোট না থাকলে তার পুরো সুবিধা তুলবে বিজেপি। তৃণমূল-বিরোধী ভোটের সিংহ ভাগই তখন গেরুয়া শিবিরের দিকে চলে যেতে পারে। কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, ‘‘তৃণমূল না হয় অতীতে খাল কেটে বাংলায় বিজেপিকে এনেছিল! তাই বলে গঙ্গা দিয়ে বিজেপিকে নবান্নে পৌঁছে দেওয়া কংগ্রেসের কৌশল হতে পারে না! এই লক্ষ্য মাথায় রেখেই সভাপতির নেতৃত্বে সবিস্তার আলোচনা হবে আশা করি।’’