আদালত খেকে বের হচ্ছেন পবন রুইয়া। নিজস্ব চিত্র।
জেসপ কাণ্ডে ধৃত শিল্পপতি পবন রুইয়াকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠাল আদালত। রেলের দায়ের করা একটি প্রতারণা সংক্রান্ত অভিযোগে শনিবার রুইয়াকে দিল্লির সুন্দরনগরের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। রবিবার দুপুরে তাঁকে ব্যারাকপুর আদালতে হাজির করান তদন্তকারীরা। সরকারি কৌঁসুলি এবং রুইয়ার আইনজীবীদের সওয়াল-জবাব শোনার পরে সিআইডির আর্জি মেনে ধৃতকে ১৪ দিনের জন্য পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন ব্যারাকপুরের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট শেরিং ইয়ানচেন লেপচা। রুইয়াকে জেরা করে জেসপ কাণ্ডের নানা উত্তর খোঁজা হবে বলে সিআইডি সূত্রের খবর।
ছুটির দিনে ব্যারাকপুর আদালতে লোক থাকে না বললেই চলে। এ দিন অবশ্য সকাল থেকেই পুলিশ-র্যাফে ছয়লাপ। তত্ত্বাবধানে হাজির খোদ সিআইডির স্পেশ্যাল সুপার শুভঙ্কর ভট্টাচার্য। কথায় কথায় শোনা যাচ্ছিল, ভিআইপি অভিযুক্তকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখতেই এই বন্দোবস্ত!
বেলা একটা। সিআইডির গাড়ি এসে থামল সোজা কোর্ট লক-আপের সামনে। মাঝের সিট থেকে দুই গোয়েন্দা অফিসারের ঘেরাটোপে বেরিয়ে এলেন কালচে-নীল জ্যাকেট, ছাই রঙা টি-শার্ট, কালচে-নীল ট্রাউজার্স পরা ধৃত। শিল্পপতি পবন রুইয়া। গাড়ি থেকে কোর্ট লক-আপের পথে সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি তিনি। শুধু মিটিমিটি হেসেছেন। এ দিন এজলাসে হাজির করানো হয়নি তাঁকে। কোর্ট লক-আপেই ছিলেন। আদালতের নির্দেশের পর সিআইডির গাড়িতে ওঠার সময় তাঁর মুখে অবশ্য হাসি দেখা যায়নি।
রেলের অভিযোগ, ২০১২ সালে জেসপকে ৭টি রেক এবং আরও কিছু সরঞ্জাম তৈরির জন্য ৫০ কোটি টাকার বরাত দেওয়া হয়েছিল। তার জন্য কাঁচামালও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চুক্তি মেনে কোনও রেক তৈরি করেনি জেসপ। কাঁচামালেরও হিসেব দেননি। পুজোর আগে জেসপে আগুন লাগার পরে বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয়। নভেম্বর মাসের শেষে দমদম থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে রেল। সেই মামলাতেই রুইয়াকে খোঁজা হচ্ছিল। দিল্লির সুন্দরনগরের বাড়িতে তিনি রয়েছেন বলে খবর পায় সিআইডি। শনিবার সেখান থেকেই তাঁকে পাকড়াও করা হয়।
আরও পড়ুন: জন্মদিনেই দরজা ভেঙে পবন রুইয়াকে পাকড়াও সিআইডি-র
এ দিন আদালতে রুইয়ার হয়ে সওয়াল করেন অয়ন ভট্টাচার্য এবং রঞ্জন দাস-সহ পাঁচ জন আইনজীবী। আদালতে তাঁরা জানান, ২০০৮ সালের মার্চ মাসে জেসপের ডিরেক্টর পদ ছেড়ে দেন পবন রুইয়া। ২০১২ সালের চুক্তির ক্ষেত্রে তাঁর কোনও দায় নেই। এ নিয়ে রেল ধৃতকে চিঠি দিলে তিনি তা জেসপ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেন। রেলের সঙ্গে এই বিরোধ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টেও মামলা চলছে। সেখানেও রেলের কোনও প্রতিনিধি হাজিরা দেননি বলে ধৃতের কৌঁসুলিদের অভিযোগ। তাঁরা আদালতে জানান, শনিবার সিআইডি কোনও গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে যায়নি। নিজেদের বক্তব্যের সপক্ষে কিছু নথিপত্রও আদালতে জমা দেন
সরকারি কৌঁসুলি পল্লব চৌধুরী আদালতে পাল্টা জানান, পবন রুইয়া জেসপের ডিরেক্টর পদে নেই ঠিকই। কিন্তু জেসপের মালিক সংস্থা রুইয়া গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান তিনি। ফলে জেসপ সংক্রান্ত অভিযোগের দায় তিনি এড়াতে পারেন না। তাঁর অভিযোগ, রেল বারবার হিসেব চেয়েও পায়নি। সরেজমিনে দেখতে গিয়ে রেলকর্তারা দেখেন, কোনও মালপত্র নেই। জেসপে আগুন লাগার ফলে কী ভাবে ওই চুক্তি সংক্রান্ত কাগজপত্র পুড়ল, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
এ দিন ব্যারাকপুর আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন পবন রুইয়ার দাদা দীপক রুইয়া ও ছেলে রাঘব। বাবার গ্রেফতারির পর দৃশ্যতই হতাশ রাঘব। বললেন, ‘‘জানি না কী হবে!’’ দীপকের মন্তব্য, ‘‘আমাদের যা বক্তব্য তা আইনজীবীরা আদালতকে জানিয়েছেন।’’ আদালতের নির্দেশের পরে রুইয়ার আইনজীবী রঞ্জন দাস বলেন, ‘‘প্রশাসন, রেল ছক কষে রুইয়াকে ফাঁসিয়েছে। নিজেরা আলোচনা করে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ স্থির করা হবে।’’