ফিরিয়েছিল মেডিক্যাল, মুখ্যমন্ত্রীকে লিখতেই ঠাঁই

দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক অটোরিকশা চালককে সঙ্গীরা নিয়ে গিয়েছিলেন এসএসকেএমে। ‘রেফার’ করে দেন কর্তৃপক্ষ। তারপর চেনা ছবি। একের পর এক হাসপাতালে ঠোক্কর।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় ও কিংশুক গুপ্ত

কলকাতা ও ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০৪:১৩
Share:

বাবা-মার সঙ্গে ছোট্ট দেবা। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক অটোরিকশা চালককে সঙ্গীরা নিয়ে গিয়েছিলেন এসএসকেএমে। ‘রেফার’ করে দেন কর্তৃপক্ষ। তারপর চেনা ছবি। একের পর এক হাসপাতালে ঠোক্কর। শেষমেষ জখম চালককে নিয়ে সটান কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে পৌঁছে যান সঙ্গীরা। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে জখমকে ভর্তি নিতে আর দেরি করেননি এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

সেটা ছিল গত ৩১ মে। মাস দুয়েক পরে প্রায় একই অভিজ্ঞতা হল ঝাড়গ্রামের বেনাগেড়িয়ার নামাতা দম্পতির। পেশায় রিকশাচালক রঞ্জিত মাহাতো ও তাঁর স্ত্রী কাজল দেড় বছরের ছেলে দেবাকে নিয়ে গত আড়াই মাসে দশ বারের বেশি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন। একরত্তি ছেলেটার চোখে ক্যানসার। চিকিৎসকেরা ‘অবিলম্বে কেমোথেরাপি দরকার’ বলে লিখে দিয়েছেন। তবু এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে ঘুরে ছেলেকে ভর্তিটুকু করতে পারেননি তাঁরা।

অসহায় বাবা-মা ২০ জুলাই খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। আর তারপরই এক সপ্তাহে মুশকিল আসান! বাড়িতে ফোন করে ডেকে পাঠিয়ে বৃহস্পতিবার রীতিমতো খাতির করে দেবাকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে কলকাতা মেডিক্যালেই। দফায়-দফায় চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে গিয়েছেন ওই শিশুকে।

Advertisement

একের পর এক এমন ঘটনায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তবে কি মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত না পৌঁছলে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা জুটবে না! দেবার বাবা-মাও বলছেন, ‘‘সকলের পক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত পৌঁছনো কি সম্ভব? আর মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষেও কি সব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা বাস্তবসম্মত?’’

মাস তিনেক আগে ডান চোখের মণির কাছে একটা ফুসকুড়ি হয়েছিল ছোট্ট দেবার। ক্রমে তা ফুলে ওঠে। ধরা পড়ে ক্যানসার। দ্রুত ওই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারায়। আর এখন তো গোটা চোখটা দলাপাকানো মাংসপিণ্ড হয়ে গিয়েছে। যন্ত্রণায় ঘুমোতে পর্যন্ত পারে না দেবা। ছেলের চিকিৎসার জন্য এর পরই দোরে দোরে ঘোরা শুরু রঞ্জিত আর কাজলের। চিকিৎসকেরা লিখে দিয়েছিলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করে কেমোথেরাপি না দিলে দেবার রোগ আরও জটিল হবে। তারপরও, গত আড়াই বারবার ঝাড়গ্রাম থেকে কলকাতা মেডিক্যালে এসে হন্যে হয়ে ঘুরেও তাঁরা দেবাকে ভর্তিটুকু করতে পারেননি। অভিযোগ, রেডিওথেরাপি বিভাগে গিয়ে শুনতে হয়েছে, ‘ডাক্তারবাবু আসেননি। তাই কেমো দেওয়া হবে না।’

কিন্তু আড়াই মাস ধরে দেবাকে ঘোরানো হল কেন? যেখানে সামান্য দেরিতেও দ্রুত ক্যানসার ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে!

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ তপনকুমার লাহিড়ির ব্যাখ্যা, ‘‘আসলে একটু বোঝাপড়ার অভাব হয়েছিল। তবে এখন আর কী হয়েছিল ভেবে লাভ নেই। সব মিটে গিয়েছে। ওর চিকিৎসায় কোনও ত্রুটি রাখা হবে না।’’ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি-র প্রধান শ্যামল সরকার আরও জানালেন, চিকিৎসায় দেরি তাঁদের ইচ্ছাকৃত নয়। এটা ‘সিস্টেম’-রই অঙ্গ। প্রচুর রোগীর চাপে নানা পরীক্ষার তারিখ পাওয়া, টিউমার বোর্ডে আলোচনা হওয়া এবং শেষ পর্যন্ত কেমোথেরাপির জন্য শয্যা পাওয়াটা লটারি পাওয়ার মতো।

মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়ে অবশেষে দেবার সেটুকু সৌভাগ্য হয়েছে। তাই তার মা কাজলদেবী বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তবে একই সঙ্গে তাঁর কাছে আবেদন, আমাদের মতো অভিজ্ঞতা যাতে আর কারও না হয় সেটা দেখুন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement