CPM

আন্দোলনের ঝাঁঝ কই, উত্তর হাতড়াচ্ছে সিপিএম

আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দলের ‘ব্যর্থতা’র কথা ফের উঠে আসতে শুরু করেছে সিপিএমের সম্মেলন-পর্বে। জেলা সম্মেলনে প্রতিনিধিদের একটা বড় অংশই এই নিয়ে সরব।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৪:৪৯
Share:

জেলার অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে সমস্যা বুঝতে পারছেন দলের রাজ্য নেতৃত্বও। —প্রতীকী চিত্র।

রোগ ধরা যাচ্ছে। কিন্তু রোগ ঝেড়ে ফেলার তৎপরতা চোখে পড়ছে না! এমনই সঙ্কটে পড়েছে সিপিএম।

Advertisement

আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দলের ‘ব্যর্থতা’র কথা ফের উঠে আসতে শুরু করেছে সিপিএমের সম্মেলন-পর্বে। জেলা সম্মেলনে প্রতিনিধিদের একটা বড় অংশই এই নিয়ে সরব। জেলা সম্মেলনের প্রতিবেদনেও স্বীকার করা হচ্ছে, ‘স্থানীয় মানুষের দাবি ও সমস্যা চিহ্নিত করে ধারাবাহিক আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ত্রুটি থেকে যাচ্ছে’। জেলার অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে সমস্যা বুঝতে পারছেন দলের রাজ্য নেতৃত্বও। কিন্তু তার পরে? আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতে সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

জেলা সম্মেলন থেকে উঠে আসা নানা বিষয় রাজ্য স্তরে পর্যালোচনা করাই সিপিএমের সাংগঠনিক রেওয়াজ। আন্দোলন ও কর্মসূচির অগ্রগতি নিয়েও জেলা থেকে যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তার প্রেক্ষিতে আলোচনা হয়েছে দলের রাজ্য নেতৃত্বে। সিপিএম সূত্রের খবর, রাজ্য নেতাদের বড় অংশই আন্দোলনের শ্লথতা নিয়ে একমত। তবে একই সঙ্গে তাঁরা এটাও মনে করছেন, রাজ্য স্তর থেকে বিষয় ধরে কর্মসূচি বেঁধে না-দিলে নিচু তলায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কিছু হচ্ছে না। কর্মী-সমর্থকদেরও নামানো যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় আপাতত রাজ্য থেকে কর্মসূচি ঠিক করে দেওয়ার পথেই যাচ্ছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

Advertisement

বি আর অম্বেডকরকে নিয়ে তাঁর মন্তব্যের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ক্ষমাপ্রার্থনা ও পদত্যাগ চেয়ে আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশ জুড়ে ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালনের ডাক দিয়েছে পাঁচ বাম দল। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব আপাতত সব জেলাকে বার্তা দিচ্ছেন, সর্বত্র ওই দিন চোখে পড়ার মতো করে পথে নামতে হবে। তার পরে জানুয়ারি মাসে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ-সহ একগুচ্ছ বিষয়ে রাস্তায় নামার কর্মসূচি নেওয়া হবে। জিনিসপত্র, ওষুধের দাম-সহ বেশ কিছু প্রশ্নে আন্দোলনের রূপরেখা আগেই আলোচনা হয়েছিল সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। সেটাই নিচু স্তরে রূপায়ণের চেষ্টায় আছে বাংলার সিপিএম।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘বাংলার রাজনীতিতে মেরুকরণ করেই চলেছে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু আমরা যদি সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে রাস্তায় লড়াই না চালাতে পারি, তা হলে এই প্রবণতা আরও বেড়ে চলবে। অথচ দুঃখজনক হলেও এটা সত্যি যে, সেই উদ্যোগ সর্ব স্তরে দেখা যাচ্ছে না। রাজ্য থেকে কর্মসূচি ঠিক করে দিলে যতটা হওয়ার, হচ্ছে!’’

নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে সিপিএমের এরিয়া সম্মেলন। জেলা হয়ে এই পর্ব চলবে ফেব্রুয়ারির রাজ্য সম্মেলন পর্যন্ত। তার পরে আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে দলের পার্টি কংগ্রেস। সম্মেলন-পর্ব শুরু হলেই সিপিএমের বড় অংশের যাবতীয় মনোযোগ চলে যায় কমিটি গঠনে! সেই সময়ে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে আন্দোলন। সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘আর জি কর-কাণ্ডে দল কেন আরও বেশি সক্রিয় হয়ে কর্মসূচি নিল না, জেলা সম্মেলনে সেই প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু জেলা বা স্থানীয় স্তরে তার জন্য বিশেষ কেউ নিজেরা সক্রিয় হচ্ছেন না! আর জি কর নিয়ে এখন আবার নতুন করে প্রতিবাদ হচ্ছে। ছাত্র বা মহিলা সংগঠনের কিছু প্রতিবাদ ছাড়া তেমন ভাবে দলের আর কেউ নেমেছে কই!’’

সাম্প্রদায়িক বিভাজনের আড়ালে আর জি করের ন্যায়-বিচারের অধিকার কেড়ে নেওয়ার ‘চক্রান্তে’র বিরুদ্ধে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বামফ্রন্ট ও সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন অবশ্য বারাসতে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে ২৭ ডিসেম্বর। তবে আলোচনা যা, রাস্তায় তার প্রতিফলন তুলনায় নেহাতই সামান্য!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement