সোমবার আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। —ফাইল চিত্র।
বন্দিদশা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বন্দিদশা থেকে মুক্তির জন্য ‘বন্দি মুক্তি আন্দোলনকারী’দের বার্তা দিলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে বর্তমানে কলকাতার প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে বন্দি রয়েছেন পার্থ। সোমবার আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়েছিল প্রাক্তন মন্ত্রীকে। আদালত থেকে ফেরার সময় বললেন, ‘‘যারা বন্দি মুক্তি আন্দোলন করে, তাদের আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমি তো ৩০০ দিন বিনা বিচারে আটক আছি। তারা কোথায়?’’ তবে পার্থের এই আহ্বানে সাড়া দিতে রাজি নয় গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি (এপিডিআর)।
শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গত বছরের ২২ জুলাই দক্ষিণ কলকাতার নাকতলায় পার্থের বাড়িতে হানা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২৩ জুলাই মধ্যরাতে গ্রেফতার করা হয় পার্থকে। তার পর তদন্ত যত এগিয়েছে, ততই তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। বর্তমানে পার্থের ঠিকানা প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার। গ্রেফতারের পর মন্ত্রিত্ব খুইয়েছেন পার্থ। পাশাপাশি তৃণমূল থেকে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সব কিছু হারিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে পড়েছেন তিনি। অতীতে তাঁর গলায় আক্ষেপের সুরও শোনা গিয়েছে। এ বার বন্দিদশা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করলেন। পাশাপাশি বন্দিদশা থেকে মুক্তির জন্য ‘বন্দি মুক্তি আন্দোলনকারী’দের উদ্দেশে বার্তা দিলেন পার্থ।
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এপিডিআরের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিৎ শূর আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘পার্থবাবু আমাদের স্মরণ করেছেন। এ জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছি। কিন্তু পার্থবাবু ১০ বছর রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন। শাসকদলের মহাসচিব ছিলেন। গত ১০ বছরে বহু রাজনৈতিক বন্দি বিনা বিচারে জেল খাটছেন। বাম আমলের সময় থেকেও অনেক বন্দি বিনা বিচারে জেল খাটছেন। মুখ্যমন্ত্রী-সহ পার্থবাবুদের দরজায় দরজায় ঘুরেছি। এক জন রাজনৈতিক বন্দিকেও মুক্তি দেননি।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘পার্থবাবুর কথা খুবই দুঃখজনক। বিপদে পড়ে আমাদের কথা স্মরণ করেছেন। পার্থবাবুকে যদি এক দিনও বিনা বিচারে জেল খাটতে হয়, সেটা অন্যায়। আমরা চাই না, কেউই বিনা বিচারে জেল খাটুক। পার্থবাবুর বিচার হোক। নিরপরাধ হলে মুক্তি হোক। তবে তিনি এক জন নিপীড়ক, তাঁর পাশে থাকতে পারছি না আমরা। তাঁর বিরুদ্ধে জনগণের টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে। প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিতে পারছি না। ফলে এই ধরনের মানুষের পাশে থাকতে পারি না আমরা।’’
সোমবার আদালতে আসার সময়ও পার্থের চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট ছিল। সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন প্রশ্নবাণের মুখে সেই সময়ও বলেছিলেন, ‘‘আরে আমরা ৩০০ দিনের উপরে বিনা বিচারে আছি, সেটা নিয়ে বলুন। ৩০০ দিনের উপর বিনা বিচারে আছি আমি একজন বন্দি...।’’ তার পর আদালত ছাড়ার সময়ও সেই নিয়েই মুখ খোলেন পার্থ।