মুখোমুখি জেরা হবে কাদের-নাসিরের

সাড়ে চার বছর পরে মুখোমুখি হতে চলেছে দু’ভাই। তবে পার্ক সার্কাসের নর্থ রেঞ্জের বাড়ির বৈঠকখানায় নয়, জেলে— পুলিশি জেরার সামনে। কাদের খান ও তার আপন ভাই নাসির খান। দু’জনেই পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত। এদের মধ্যে দোষী সাব্যস্ত নাসিরকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৫৬
Share:

কাদের খান

সাড়ে চার বছর পরে মুখোমুখি হতে চলেছে দু’ভাই। তবে পার্ক সার্কাসের নর্থ রেঞ্জের বাড়ির বৈঠকখানায় নয়, জেলে— পুলিশি জেরার সামনে।

Advertisement

কাদের খান ও তার আপন ভাই নাসির খান। দু’জনেই পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত। এদের মধ্যে দোষী সাব্যস্ত নাসিরকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। বর্তমানে সে প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি। আর নাসিরের দাদা কাদের সাড়ে চার বছর লুকিয়ে থাকার পর বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির কাছে গ্রেটার নয়ডায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।

তদন্তকারীদের বক্তব্য, ঘটনা নিয়ে নাসিরের বয়ানের সঙ্গে কাদেরের বক্তব্যের বিস্তর অসঙ্গতি পাওয়া যাচ্ছে। কারণ কাদেরের দাবি, সে এ সবের মধ্যেই ছিল না, তাকে নাকি ফাঁসানো হয়েছে আর যাবতীয় দায় সে চাপাচ্ছে নাসির-সহ গাড়ির অন্য আরোহীদের উপর। এক পুলিশ অফিসার বলেন, ‘‘কাদের যা-ই দাবি করুক, ওর বিরুদ্ধে সব প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। তবে নাসির আর ওর বক্তব্যে যে সব গরমিল পাওয়া যাচ্ছে, তা পরিষ্কার হওয়াটা দরকার। সে জন্য দুই ভাইকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা প্রয়োজন।’’

Advertisement

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সাজাপ্রাপ্ত নাসিরকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া সম্ভব নয়। আবার কাদের ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে থাকবে। তা হলে কী ভাবে হবে সেই সাক্ষাৎ?

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে দু’ভাবে দু‌ই ভাইয়ের মোলাকাত হতে পারে।

প্রথমত, কাদেরের পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কাদেরকে ওই জেলে পাঠানো হলে দুই ভাইকে মুখোমুখি বসিয়ে জেলের মধ্যে জেরা করার জন্য আদালতে আবেদন জানাতে পারে পুলিশ। আদালত নির্দেশ দিলে জেলের মধ্যে কারা দফতরের এক অফিসারের উপস্থিতিতে বিশেষ একটি ‘ইনটারোগেশন রুম’-এ দুই ভাইকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে।

দ্বিতীয়ত, কাদেরের পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থাতেই আদালতের কাছে আবেদন করতে পারেন তদন্তকারীরা। সে ক্ষেত্রে কাদেরকে যাতে ওই বিশেষ জেরার জন্য জেলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়, সেই মর্মেও পুলিশকে আবেদন করতে হবে আদালতের কাছে। কারণ পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন এমনিতে কেউ জেলে যেতে পারে না।

এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘‘আমরা সমস্ত আইনি দিক খতিয়ে দেখছি। যেটা সুবিধেজনক হবে, আমরা সেই পদক্ষেপই করব।’’ তবে শুধু কাদের ও নাসির নয়, দোষী সাব্যস্ত রুমান খান ও সুমিত বজাজ এবং কাদেরের সঙ্গেই এত দিন পালিয়ে থাকা আর এক অভিযুক্ত মহম্ম আলি খান— সবাইকে এক সঙ্গে বসিয়ে জেরা করতে চায় পুলিশ।

পুলিশ জানাচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে কাদেরের বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করানো হবে। কাদেরের শরীর থেকে নেওয়া নমুনার সঙ্গে যে গাড়িতে ধর্ষণ করা হয়েছিল, সেই গাড়িতে পাওয়া বিভিন্ন নমুনা মিলিয়ে দেখা হবে।

এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘আদালত হুলিয়া জারি করার পরেও কাদের খান সাড়ে চার বছর ধরে ফেরার ছিল। ওই অপরাধেই কারও সাত বছর সাজা হতে পারে।’’ তিনি বলেন, ‘‘কাদেরকে পালাতে সাহায্য করা, আশ্রয় দেওয়া ও টাকার জোগান দিয়ে সাহায্য করার অভিযোগে ওর কয়েক জন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আরও তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করছি।’’

তবে পুলিশেরই ভিতর থেকে গোয়েন্দা অভিযানের খবর কাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এমন গুরুতর অভিযোগও উঠেছে। সেই ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? এক তদন্তকারী অফিসারের বক্তব্য, আপাতত এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের সম্পর্কে কিছু খবর মিলেছে। বাহিনীর শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পার্ক স্ট্রিটের একটি হোটেলের নাইট ক্লাবের বাইরে থেকে ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে সুজে়ট জর্ডন নামে এক মহিলাকে গাড়িতে তোলে কাদের ও তার চার সঙ্গী। তার পর গাড়ির ভিতরে ধর্ষণ করে মহিলাকে তারা রাস্তায় ফেলে দেয় বলে অভিযোগ ওঠে।

লালবাজারের একটি সূত্রের খবর, তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে কাদের বার বার জানালে তদন্তকারীরা তাকে প্রশ্ন করেন, সে ক্ষেত্রে কেন সে কলকাতা ছেড়ে পালাল এবং এত বছর গা ঢাকা দিয়ে থাকল? তার কোনও সদুত্তর সে দিতে পারেনি বলে পুলিশের দাবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement