এই বাড়ি দেখিয়েই টাকা নেন বিজেপি নেতার ছেলে। নিজস্ব চিত্র
কখনও তিনি দাবি করছেন, ক্ষতিপূরণের টাকা নেননি। কখনও বলছেন, ছেলে যে ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছিল, তিনি জানতেন না। কখনও অভিযোগ করছেন, তৃণমূল তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত। আবার কখনও বলছেন, ক্ষতিপূরণের টাকা তিনি গরিবদের মধ্যে বিলি করেছেন।
ছেলে আমপানে ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার টাকা নেওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন হাওড়ার উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের বিজেপি পরিচালিত বাসুদেবপুর পঞ্চায়েতের প্রধান প্রশান্ত মণ্ডল। অস্বস্তিতে এলাকার বিজেপিও নেতৃত্ব। কারণ, আমপান ক্ষতিপূরণের শাসকদলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁরা। এ বার তাঁদেরই নেতার দিকে অভিযোগের আঙুল।
প্রশান্তের পাকা বাড়ি রয়েছে। আমপানে বাড়ির চিলেকোঠার কয়েকটি টালি উড়ে গিয়েছিল বলে দাবি এলাকাবাসীর একাংশের। প্রধানের ছেলে পবিত্র ক্ষতিপূরণের জন্য পঞ্চায়েতে আবেদন করেছিলেন। ‘ত্রুটিপূর্ণ’ তালিকা খতিয়ে দেখার কাজে প্রশাসনের টাস্ক ফোর্স তৈরি হওয়ার আগেই ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়ে যান পবিত্র। সিপিএম এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পদে থাকার সুযোগ নিয়ে প্রশান্ত ছেলেকে টাকা পাইয়ে দিয়েছেন।
ব্লক প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, পঞ্চায়েতের তরফে পাঠানো তালিকায় নাম ছিল প্রধানের ছেলের। সেই তালিকা মেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। প্রধানের দাবি, ‘‘তালিকায় ছেলের নাম রয়েছে, জানতাম না। ক্ষতিগ্রস্তদের যে তালিকা এসেছিল, তা ব্লক অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। তৃণমূল আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে।’’ পবিত্রর বক্তব্য, ‘‘ঘরের ক্ষতি হয়েছিল বলেই ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলাম।’’
প্রশাসনের সিদ্ধান্ত, যে সব ভুয়ো ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, তাঁদের থেকে টাকা ফেরত নেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গ তুলতেই খেই হারান প্রশান্ত। তিনি বলেন, ‘‘টাকা তো সব গরিবদের মধ্যে বিলি করে দিয়েছি। যাঁরা ক্ষতিপূরণ পাননি, তাঁদের টাকা দিয়েছি। সরকারকে ফেরত দেওয়া আর গবিবদের দেওয়ার মধ্যে কোনও ফারাক নেই।’’ হাওড়া গ্রামীণ জেলা বিজেপির সভাপতি শিবশঙ্কর বেজের মন্তব্য, ‘‘এমনটা কাম্য নয়। খোঁজ নিয়ে দলীয় স্তরে তদন্ত হবে।’’ মহকুমাশাসক (উলুবেড়িয়া) অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ ভাবে সরকারি টাকা কোনও ব্যক্তি বা পঞ্চায়েত প্রধান বিলিয়ে দিতে পারেন না। আমি বিষয়টি জানি না। বিডিও-র সঙ্গে কথা বলব।’’
তৃণমূল এ নিয়ে মন্তব্য করেনি। বাসুদেবপুর অঞ্চলের তৃণমূল নেতা মৃণাল মাইতি বলেন, ‘‘আমার কাছে তথ্য নেই।’’ সিপিএমের উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের নেত্রী অপর্ণা পুরকাইতের অভিযোগ, ‘‘প্রধানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্লক কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। উনি কাউকেই টাকা দেননি। পুরোটাই নিজে নিয়েছেন।’’