AMRI Hospital Fire

অগ্নি-সাক্ষী ৪০০, সাক্ষ্য নেওয়া চলছে ৮ নম্বরের

পারমিতা গুহ ঠাকুরতার হতাশা পরিণত হয়েছে ক্ষোভে। তাঁর মায়ের প্রাণ কেড়েছে আমরির আগুন। মেয়ের বুকেও জ্বলে ক্ষোভের আগুন। ১২ বছর পরেও বিচার না পাওয়ায় ক্ষোভ।

Advertisement

মিলন হালদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:২৫
Share:

আমরি হাসপাতালে বিধ্বংসী আগুন। —ফাইল চিত্র।

মামলায় সাক্ষীর সংখ্যা ৪০০! এখন চলছে আট নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ!

Advertisement

প্রতিটা শুনানিতে আদালতে এসে হাঁ করে শুনানি শুনে ধীর পায়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। তাঁর ১৪ বছরের মেয়েটাকে গিলে খেয়েছে আগুন। আর ধনঞ্জয় পালকে গিলে খায় হতাশা। ঢাকুরিয়ার আমরি-র সেই অগ্নিকাণ্ডের পরে কেটে গিয়েছে ১২ বছর। ‘‘একটা মামলা শেষ হতে এত সময় লাগে!’’ বিড়বিড় করতে করতে কোর্টরুম ছাড়েন বাবা।

পারমিতা গুহ ঠাকুরতার হতাশা পরিণত হয়েছে ক্ষোভে। তাঁর মায়ের প্রাণ কেড়েছে আমরির আগুন। মেয়ের বুকেও জ্বলে ক্ষোভের আগুন। ১২ বছর পরেও বিচার না পাওয়ায় ক্ষোভ।

Advertisement

২০১১-র ৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে আমরি হাসপাতালের আগুনে প্রাণ যায় ৯৪ জনের। বাঁকুড়ার জয়রামবাটির ধনঞ্জয় পালের ১৪ বছরের মেয়ে প্রাকৃতা বাইক থেকে পড়ে মাথায় চোট নিয়ে ৫ ডিসেম্বর ভর্তি হয়েছিল হাসপাতালে। ৮ ডিসেম্বর চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, সে বিপদসীমার বাইরে। ৯ ডিসেম্বরই জেনারেল বেডে দিয়ে ১০ তারিখ ছুটি। ‘‘ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে যাওয়া মেয়েটার দেহ পেয়েছিলাম ৯ তারিখ,’’ যন্ত্রণা দলা পাকিয়ে ওঠে ধনঞ্জয়ের গলায়।

বাঘাযতীনের পারমিতার মা ৬৩ বছরের মৃদুলা গুহ ঠাকুরতার মাথায় টিউমার ছিল। ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। ধনঞ্জয়, পারমিতাদের হতাশা-ক্ষোভ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয় বিচার-প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা।

আলিপুর আদালত সূত্রে খবর, ২০১৬ সালে মামলার চার্জ গঠন হয়েছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত হাসপাতালের কর্তা আর এস গোয়েঙ্কা, প্রশান্ত গোয়েঙ্কা, রবি তোদি, রাধেশ্যাম আগরওয়ালদের আইনজীবী সেলিম রহমান বলেন, ‘‘এখন মৃতদেহগুলির ময়না-তদন্ত করা চিকিৎসক বিশ্বনাথ কাহালির সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।’’ আদালত সূত্রের খবর, এই মামলায় সাক্ষী ৪০০ জনের বেশি। বিশ্বনাথ আট নম্বর সাক্ষী। অভিযুক্ত এস কে তোদি মারা গিয়েছেন। মামলার সরকারি আইনজীবী শক্তিকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কোভিডের কারণেও বিচার-প্রক্রিয়ার গতি শ্লথ হয়েছে।’’ ১১ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি।

আইনজীবীদের দাবি, এত বিপুল সংখ্যক সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সহজে শেষ হওয়ার নয়। আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুবই দুঃখজনক। এত দিনে তো মামলার ফয়সালা হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। পুলিশ ঠিক মতো তদন্ত করলে এমন অবস্থা হত না। এত সাক্ষীরও প্রয়োজন হত না। অভিযুক্তেরা প্রভাবশালী হলে সাধারণ মানুষকে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’’

দ্রুত শুনানির জন্য কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ধনঞ্জয়-পারমিতারা। তাঁদের দাবি, এই মামলা আর পাঁচটা সাধারণ মামলার মতো নয়। তাই তার শুনানি দ্রুত হওয়া উচিত। পারমিতা জানান, মামলা সংক্রান্ত কাজে তাঁর এখনও পর্যন্ত প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে।

আমরির আগুনে মৃতদের স্মৃতির উদ্দেশে রবীন্দ্র সরবোরের সাফারি পার্কে তৈরি করা হয়েছে সৌধ। প্রতি বছরের মতো এ বারও ৯ ডিসেম্বর সেই একই প্রশ্ন নিয়ে স্মৃতিসৌধের সামনে জড়ো হবেন স্বজনহারা মানুষগুলো, কতটা পথ হাঁটলে পরে মিলবে বিচার?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement