রাজভবনের বাইরে সূর্যকান্ত মিশ্রের সাংবাদিক বৈঠক। ছবি: সুদীপ আচার্য।
গত বিধানসভা নির্বাচনে জেতার জন্য বাংলাদেশের মৌলবাদী-সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জামাতকে ব্যবহার করার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে আগেই উঠেছে। এ বার পুরভোটেও তাদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠল। আজ, শনিবার রাজ্যের ৯১টি পুরসভায় ভোট। তার আগের দিন শুক্রবার রাজভবনে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে পৃথক ভাবে দেখা করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের নেতৃত্বে প্রতিনিধিরা অভিযোগ করে এসেছেন, জামাত নেতা নূরুদ্দিন আলি নদিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছেন। জেলার পুলিশ সুপার তাঁর অধস্তন অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর উপর উপরতলার চাপ আছে। ফলে নূরুদ্দিনের কাজকর্মে যেন বাধা দেওয়া না হয়। বিরোধীদের বক্তব্য, শাসকের চাপে পুলিশকর্তাই যেখানে দেশবিরোধী শক্তির দাপাদাপির সামনে অসহায়, সেখানে আমজনতার নিরাপত্তা কতটুকু এবং ভোট কত অবাধ হবে, তা সহজেই অনুমেয়। শাসক দল প্রত্যাশিত ভাবেই বিরোধীদের অভিযোগ ‘আজগুবি কল্পনাপ্রসূত’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
এ দিন সূর্যবাবু রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে নূরুদ্দিন প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এই বিষয়ে যা খবর আছে, তা রাজ্যপালকে জানিয়ে অনুরোধ করেছি, যাতে তিনি খবরটার সত্যতা যাচাই করেন।’’
সূর্যবাবু রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার পরে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন বিজেপি-র প্রতিনিধিরা। রাহুলবাবু, শিশির বাজোরিয়া, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, জয় বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ সেই দলে ছিলেন।
রাজভবন থেকে বেরনোর পরে রাহুলবাবু বলেন, ‘‘গত ১৭ এপ্রিল নদিয়ার এসপি অর্ণব ঘোষ ওসিদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, তৃণমূলকে
যেন সহযোগিতা করা হয়। নূরুদ্দিন বাইরে থেকে দু’ হাজার লোক নিয়ে রিগিং করতে এসেছে। এসপি বলেছেন, তাঁকে যেন ঘাঁটানো না হয়। রাজ্যপাল বলেছেন, খানিক ক্ষণ আগে তাঁর কাছেও তাঁর সূত্র থেকে একই খবর এসেছে!’’ রাজভবন সূত্রের খবর, রাজ্যপাল নূরুদ্দিন প্রসঙ্গে বিরোধীদের অভিযোগ শুনেছেন এবং তা মাথায় রেখেছেন।
বাংলাদেশের জামাত বর্ধমানের খাগ়ড়াগড়ে বিস্ফোরণে অভিযুক্ত সংগঠন। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে বহু বিস্ফোরণ ঘটানো, সেখানকার প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র-সহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটে জেতার জন্য এমন একটি দেশদ্রোহী সংগঠনের সাহায্য নিতেও পিছপা হচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশও তাঁকে সহযোগিতা করছে।
এ প্রসঙ্গেই রাহুলবাবু বলেন, ‘‘রাজ্যে যে সব পুলিশ গণতন্ত্র ধ্বংস করছেন, তাঁদের তালিকা রাষ্ট্রপতিকে পাঠানোর জন্য রাজ্যপালকে অনুরোধ করেছি। তিনি আমাদের আরও তথ্য দিতে বলেছেন। আমরা তা দেব।’’ বিরোধীদের অভিযোগকে আমল না দিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যাঁরা গিয়েছিলেন রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানাতে, তাঁরা মন্ত্রিসভার সদস্য নন। এত গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ তুললে প্রমাণ এবং সূত্রও জানানো উচিত। প্রশাসনকে বলব, সূর্যবাবু এবং রাহুলবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রয়োজনে তদন্তও করা উচিত।’’