সুষ্ঠু ভোট করানোর জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন বলে মনে করছে রাজ্য নিবার্চন কমিশনও। বিরোধীরা লাগাতার সন্ত্রাসের অভিযোগ করে আসছে। প্রত্যেক দিনই রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে বিরোধীদের উপরে হামলার অভিযোগ আসছে। এমনকী, হুগলির বাঁশবেড়িয়ায় দলের ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ এনে পুলিশের দ্বারস্থ হতে হয়েছে তৃণমূলেরই বিদায়ী পুরপ্রধানকে! এরই মধ্যে পথে নেমে সন্ত্রাসের যাবতীয় অভিযোগ নস্যাৎ করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং তা করতে গিয়েই বুধবার তিনি বললেন, ‘‘মিছিল করে করে ওদের (বিরোধী) বাড়িতে ঢুকিয়ে দেব!’’ যে মন্তব্যকে আগামী কয়েক দিনের জন্য আরও অশনি সঙ্কেত হিসাবে দেখছে বিরোধীরা।
মৌলালি থেকে মিছিল শেষে এ দিন গাঁধী মূর্তির পাদদেশে তৃণমূলের সমাবেশ থেকে মমতা মন্তব্য করেছেন, ‘‘বিরোধীরা যে ‘সন্ত্রাস, সন্ত্রাস’ বলে চিৎকার করছে, এটাই তো গণতান্ত্রিক অধিকার! ওরা তো বলতে পারছে! নীল সাদা রং করলেও ওদের ভয়। আর বলে বেড়াচ্ছে সন্ত্রাস হচ্ছে!’’ এর পরেই তাঁর ঘোষণা, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভাবেই পুরসভার ভোট হবে। যে ভাবে বনগাঁ, কৃষ্ণগঞ্জে ওরা হেরেছে, সে ভাবেই ওরা (বিরোধীরা) এই ভোটেও হারবে!’’
বিরোধীদের সন্ত্রাসের অভিযোগ খারিজ করে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, রাজ্যের কোথাও কোনও ‘ছোট ঘটনা’ ঘটলেও তাঁর কাছে খবর আসে। তাঁর দাবি, ‘‘৩৫ বছর সংগ্রাম করে এখানে (ক্ষমতায়) এসেছি। লড়াই করতে করতে এসেছি। ফোকটে আসিনি!’’ এর পরে তিনি ফিরিস্তি দেন, ক্ষমতায় থাকার সময়ে তৎকালীন শাসক দল সিপিএম কী ভাবে সন্ত্রাস করত। এখন সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বিরোধীদের মিছিলকে এক হাত নিতে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘মিছিল করে করে ওদের বাড়িতে ঢুকিয়ে দেব!’’ সম্ভবত বিষয়টির অন্য অর্থ দাড়াতে পারে আন্দাজ করেই এর পরে কিছুটা হাল্কা সুরে মমতা বলেন, ‘‘আসলে আমি বলতে চাইছি, মিছিল করে ওদের এমন প্রতিযোগিতার মুখে ফেলব, ওরা পারবে না!’’
বিরোধীরা অবশ্য রাজ্যের প্রশাসনিক কর্ণধার এবং শাসক দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর মন্তব্যকে এত হাল্কা ভাবে দেখছে না। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের কথায়, ‘‘ঘরে ঘরে ওঁর লোকেরা যা করে যাচ্ছে, সেটাই আজ মুখ্যমন্ত্রী নিজে করার হুমকি দিয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী নন, বাংলার সেরা মস্তান!’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘বোঝাই যাচ্ছে, যেখানেই সহজ ভাবে জেতা যাবে না, সেখানেই তৃণমূল সন্ত্রাস করবে। মস্তান, পুলিশ ব্যবহার করে সরকার নির্বাচনী বৈতরণী পার হবে।’’ বর্ষীয়ান কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার মন্তব্য, ‘‘যে রাজ্যে পুলিশ দুষ্কৃতীদের হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে পড়ে থাকে বা টেবিলের তলায় লুকোয়, সে রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীর মুখে এমন কথাই শুনতে হয়! তবে পুলিশকে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ থেকে বার করে আনতে পারলে এখনও তাদের দিয়েই ভাল কাজ সম্ভব।’’
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএম অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির দিনই ফের পাল্টা বলেছে, শাসক দল ভোট লুঠ করতে গেলে তারাও প্রতিরোধে তৈরি। কামারহাটিতে দু’দিন আগেই সিপিএম নেতা মানস মুখোপাধ্যায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়দের উপরে আক্রমণ হয়েছে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন বেলঘরিয়ার সভায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীদের লড়াইয়ে উৎসাহ দিতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘সামনে পুরভোট। তৃণমূল এক দিনে ঝোড়ো ব্যাটিং করে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ করতে চাইছে। যে ম্যাচের জন্য আমরা সব রকম ভাবে তৈরি।’’
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু তুলে এনেছেন তৃণমূল-বিজেপি আঁতাঁতের কথা। বেলঘরিয়া বাদামতলার ওই সভায় হাসপাতাল থেকে মানসবাবু এবং সুভাষবাবুর করা বক্তৃতাও জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হয়। সিপিএমের এই সভার প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার একই জায়গায় আবার পাল্টা সভা করবে তৃণমূল। সেখানে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের থাকার কথা। এরই পাশাপাশি, কলকাতার ১৩ নম্বর, কাটোয়ায় ১২ নম্বর ওয়ার্ড-সহ নানা জায়গা থেকেই বিরোধীদের উপরে শাসক দলের সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ অব্যাহত এ দিনও।