সংসদ বা বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) দায়িত্ব বিরোধীদের হাতে থাকাই রেওয়াজ। কিন্তু সেই রেওয়াজের বাইরে গিয়ে এ রাজ্যে বিধানসভার পিএসি চেয়ারম্যান এখন শাসক দলের বিধায়ক। ওই পদ ফেরত পাওয়ার জন্য এ বার তৎপরতা শুরু হল বিরোধী বাম ও কংগ্রেস শিবিরে।
জুলাইয়ের গোড়াতেই পিএসি-র মেয়াদ ফুরোবে। গত বছর কমিটির মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্পিকার। কিন্তু এ বার যাতে কমিটি নতুন করে গড়া হয় এবং চেয়ারম্যান বাছার অধিকার বিরোধীদের দেওয়া হয়, তার জন্য দাবি জানাতে চলেছেন কংগ্রেস ও বাম বিধায়কেরা। পিএসি-র বর্তমান চেয়ারম্যান শঙ্কর সিংহের ডাকা বৈঠকে বাম ও কংগ্রেস সদস্যেরা যান না। শুধু তা-ই নয়, কংগ্রেস ছেড়়ে তৃণমূলে যাওয়ায় শঙ্করবাবুর বিধায়ক-পদ খারিজের জন্য স্পিকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদের বক্তব্য, পিএসি-র মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটি সংসদীয় গণতন্ত্রের স্বার্থেই তাদের হাতে ফেরত আসা উচিত। পরিষদীয় দফতর সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
রাজ্যে পিএসি-র শীর্ষ পদ নিয়ে গত কয়েক বছরে টানাপড়েন হয়েছে বিস্তর। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ২০১৬ সালে পিএসি-র চেয়ারম্যান পদ বামেদের দেওয়ার জন্য স্পিকারের কাছে সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সুপারিশ এড়িয়েই স্পিকার তাঁর ক্ষমতাবলে কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়াকে চেয়ারম্যান করে দেন। যার জেরে কংগ্রেসে প্রবল অন্তর্দ্বন্দ্ব বাধে। মানসবাবুকে বয়কট করেন কংগ্রেস বিধায়কেরা। শেষ পর্যন্ত মানসবাবু দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। তার পরে চেয়ারম্যান করা হয় শঙ্করবাবুকে। অথচ তিনিও যোগ দেন তৃণমূলে! এ বার সরাসরি কংগ্রেস পরিষদীয় দলের সুপারিশ করা কোনও বিধায়ককেই পিএসি-র দায়িত্ব দেওয়ার দাবি তোলা হবে বলে প্রাথমিক আলোচনায় ঠিক করেছে কংগ্রেস ও বাম শিবির। এখনকার কমিটিতে আছেন সুখবিলাস বর্মা, অসিত মিত্র-সহ চার কংগ্রেস বিধায়ক। নতুন কমিটিতে এনে তাঁদেরই কাউকে পিএসি চেয়ারম্যান করার পক্ষপাতী মান্নানেরা।
দলবদল নিয়ে বিরোধী দলনেতা মান্নানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শঙ্করবাবুকে নোটিস পাঠিয়েছিলেন স্পিকার। শঙ্করবাবু জবাব দিয়েছেন, সনিয়া গাঁধীর পথেই তিনি আছেন! উন্নয়নের কাজ ত্বরান্বিত করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন। স্পিকারকে দেওয়ার জন্য এর জবাবি বয়ান তৈরি মান্নানের।