জমি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের রায় মেনে ‘ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক’ না দেখেই ক্ষতিপূরণের চেক এবং জমি ফেরত দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এর মধ্যে উৎসবের কী আছে, প্রশ্ন তুলল বিরোধীরা।
সিঙ্গুর দিবসে রাজ্য সরকারের উৎসব দেখে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, ‘‘কৃষি থেকে শিল্পই সভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাস। মুখ্যমন্ত্রী এই ইতিহাসকে উল্টে দিতে চান এবং নতুন করে লিখতে চান! তাঁর ইচ্ছা, পৃথিবী তাঁর এই ভবিষ্যতের মডেলকে অনুসরণ করুক।’’ বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপে দ্বিচারিতার অভিযোগও এনেছেন। তাঁর বক্তব্য, এক দিকে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, এক মাস সময় দিলাম। এর মধ্যে শিল্প করুন! এ ভাবেই যদি শিল্প হতো, তা হলে সিঙ্গাপুর বা মিউনিখ গেলেন কেন! এক দিকে শিল্পের জমি কৃষকের হাতে ফেরত দিচ্ছেন। আবার গোয়ালতোড়ে যে জমি শিল্পের জন্য আছে বলছেন, সেটা বীজ খামারের জমি। তার মানে কৃষির জমি শিল্পকে দিতে চাইছেন। সুজনবাবুর প্রশ্ন, ‘‘যদিও আইনে ‘ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক’ বলে কিছু হয় না, তবু বামফ্রন্ট সরকার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও অনিচ্ছুকদের জমি ফেরত দিতে রাজি ছিলেন। বিবাদটা ছিল জমির পরিমাণ নিয়ে। যেটা ৪০ একর ছিল, তৃণমূল তাকে ৪০০ একর বলে দাবি করছিল। এখন যেটা হল, সেটা কি কর্মপ্রত্যাশী তরুণ প্রজন্মের মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়ার উৎসব?’’
একই ভাবে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানেরও প্রশ্ন, ‘‘সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনে গোড়ায় প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির মতো নেতাদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তখন সেই আন্দোলনের আলাদা পরিপ্রেক্ষিতও ছিল। এখন বিজয় উৎসবটা কীসের? টাটাকে চলে যেতে হল, শিল্প করতে দেওয়া হল না, এ জন্যই কি উৎসব?’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘এখানে আদালতের রায় মানতে উৎসব। সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তও তো আদালতের নির্দেশ ছিল। তখন মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব কী ছিল?’’ সিঙ্গুরে আন্দোলনকারীদের তরফে সিপিআই (এম-এল) লিবারশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষেরও বক্তব্য, ‘‘আন্দোলনের অন্যতম শক্তি খেতমজুরেরা পুরোপুরি বঞ্চিত। তাঁদের জন্য কোনও ক্ষতিপূরণ নেই। লড়াইয়ের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হল!’’