বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে রাজ্যে তৃণমূলেরই দাপট। কিন্তু তার পাশাপাশিই বেড়ে চলেছে সঙ্ঘ পরিবারের কাজকর্ম। যার আড়ালে জমি তৈরি করছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে তমলুক ও কোচবিহার লোকসভা আসনে জোড়া উপনির্বাচনে ফের মেরুকরণের আশঙ্কায় রয়েছে দুই বিরোধী শিবির কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। উপনির্বাচনে যে হেতু কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের আসন সমঝোতা হচ্ছে না, তাই মেরুকরণের রাজনীতির মোকাবিলাও তাদের কাছে আরও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে।
বাম জমানায় এ রাজ্যে তেমন দাঁত ফোটাতে পারেনি আরএসএস। কিন্তু তৃণমূল মুখে যতই বিজেপি-র বিরোধিতা করুক, তাদের জমানায় আরএসএসের শাখা বিস্তার হয়েছে বিপুল। উৎসাহিত হয়ে সঙ্ঘ ও তাদের ঘনিষ্ঠ নানা সংগঠন গো-গণনা থেকে গো-পূজন, নানা রকম কর্মসূচিতে নেমেছে। সঙ্ঘ নেতৃত্ব সরাসরিই বলছেন, তৃণমূলকে তাঁরা স্থায়ী রাজনৈতিক শক্তি বলে মনে করেন না। বরং, আদর্শগত ভাবে বামেরাই তাঁদের প্রধান প্রতিপক্ষ। আর বামেদের ভাবনা, একে তো তাদের সংগঠন ক্ষয়িষ্ণু। তার উপরে তৃণমূল সরকারের একের পর এক কাজকর্মে মেরুকরণের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে বিজেপি তথা সঙ্ঘেরই সুবিধা হচ্ছে। শুধু এই উৎসবের মরসুমেই যে সব ঘটনা ঘটেছে, তাতে উদ্বিগ্ন বাম নেতৃত্ব চাইছেন পাল্টা কিছু কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নেমে বার্তা দিতে। মেরুকরণের রাজনীতির বিপদ নিয়ে আজ, শনিবারই বামফ্রন্টের বৈঠকে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা।
একই রকম উদ্বেগে কংগ্রেসও। গত লোকসভা নির্বাচনে মেরুকরণের জেরে এ রাজ্যে বিজেপি-র যে ভাবে ফায়দা হয়েছিল, সেই আশঙ্কা তাদেরও ভাবাচ্ছে। বিশেষত, কোচবিহারের মতো সীমান্তবর্তী জেলায়। বামেরা উপনির্বাচনে একা লড়বে জানিয়ে দেওয়ার পরে তমলুক ও কোচবিহার, দুই আসনে কংগ্রেসকেও প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবতে হচ্ছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের উপস্থিতিতে সোমবার কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠকে উপনির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা হবে। যদিও অধীরবাবু জানিয়ে দিয়েছেন, প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে হাইকম্যান্ডই। তৃণমূল ও বিজেপি-র মোকাবিলায় কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী চেয়েছিলেন, উপনির্বাচনে তাঁদের দল ও বামেরা একটি করে আসনে ল়়ড়ুক। মান্নান প্রাথমিক ভাবে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তীর মতো নেতার সঙ্গে এই নিয়ে কথাও বলেছিলেন। কিন্তু শ্যামলবাবু দলের কেন্দ্রীয় কমিটির অবস্থান জানিয়ে বুঝিয়ে দেন, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা এখন সম্ভব নয়। তা ছাড়া, কংগ্রেসের পছন্দ ছিল কোচবিহার আসনটি। যেখানে গত লোকসভা নির্বাচনে প্রায় ৭৪ হাজার ভোট পেয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু ওই আসন বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকও কোনও ভাবেই কংগ্রেসকে ছা়ড়বে না।
বাম শিবিরের একাংশের আশঙ্কা, কোচবিহারে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি মাথায় রাখলে তৃণমূলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে বিজেপি-ই। আলাদা লড়ে কংগ্রেস ও বামের যুদ্ধ আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তমলুকে (ওই লোকসভা এলাকার ৭টির মধ্যে তিনটি বিধানসভা আসনে জিতেছে বাম) বরং তুলনায় বেশি লড়াই দেওয়ার আশায় আছে তারা।