One Nation

এক দেশ, এক ভোট: নয়া কৌশলে বিজেপির নজরে বঙ্গের ‘সমাজ-প্রভাবী’রা, ‘পণ্ডশ্রম’ কটাক্ষ তৃণমূলের

‘এক দেশ, এক ভোট’-এর পক্ষে জনমত গড়তে অবিলম্বে রাজ্য জুড়ে প্রচার শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিজেপির নতুন কমিটিকে। তবে এই নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে বিজেপির তরফে প্রকাশ্যে এখনও কিছু জানানো হয়নি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:২৯
Share:
এই বৈঠকেই ‘এক দেশ, এক ভোট’ নিয়ে জনমত গঠনের কমিটি গড়া হয়েছে।

এই বৈঠকেই ‘এক দেশ, এক ভোট’ নিয়ে জনমত গঠনের কমিটি গড়া হয়েছে। ছবি: ফেসবুক।

‘এক দেশ, এক ভোট’-এর লক্ষ্যে এগোতে আরও এক কর্মসূচি নিল বিজেপি। সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি শুরু হল জনমত গঠনের চেষ্টাও। মাসখানেক ধরে বিভিন্ন ভাষণে ‘এক দেশ, এক ভোট’-এর পক্ষে সওয়াল করতে শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। এ বার জনমত গঠনের দায়িত্ব দিয়ে রাজ্যে রাজ্যে কমিটি গড়তে শুরু করল বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের জন্য এই কমিটি গঠিত হয়েছে শনিবার। পরের দিন থেকেই শুরু হয়ে গেল কর্মসূচি। তবে এই কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে, বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে ‘পণ্ডশ্রম’ না করার ‘পরামর্শ’ দিলেন তৃণমূলের এক রাজ্য সাধারণ সম্পাদক।

Advertisement

শনিবার সকালে বিজেপির রাজ্য দফতরে ‘এক দেশ, এক ভোট’ নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজমুদার এবং দুই সংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী ও সতীশ ঢোন্ড তো ছিলেনই, ছিলেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল। ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় আইটি ইনচার্জ তথা সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়। তাঁদের উপস্থিতিতেই আহ্বায়ক ও সহ-আহ্বায়ক নিয়োগ করে একটি কমিটি গঠন হয়েছে। বিজেপি সূত্রের খবর, ‘এক দেশ, এক ভোট’-এর পক্ষে জনমত গড়তে অবিলম্বে রাজ্য জুড়ে প্রচার শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই নতুন কমিটিকে।

এই নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে বিজেপির তরফে প্রকাশ্যে এখনও কিছু জানানো হয়নি। তবে বিজেপি সূত্রের খবর, জনমত গঠনের সুনির্দিষ্ট উপায় বলে দেওয়া হয়েছে শনিবারের বৈঠকে। সমাজে যাঁরা প্রভাবশালী, যাঁদের কথায় অন্যেরা প্রভাবিত হন (ওপিনিয়ন লিডারস), তাঁদের সঙ্গে সর্বাগ্রে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। বিদ্বজ্জন, শিল্পী, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, আইনজীবী, অধ্যাপক— এই শ্রেণির মধ্যেই সবার আগে প্রচার চালানো শুরু হবে বলে বিজেপি সূত্রের খবর। বিভিন্ন ‘প্রভাশালী’ পেশায় থাকা তরুণ প্রজন্মকেও আলাদা করে বোঝানো হবে ‘এক দেশ, এক ভোট’ নীতির ‘প্রয়োজনীয়তা’।

Advertisement

গোটা দেশে একসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভার ভোট করানো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর সরকারের ঘোষিত লক্ষ্য। বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারেও ‘এক দেশ, এক ভোট’ ব্যবস্থা চালুর অঙ্গীকার রয়েছে। সে সঙ্কল্প পূরণ করতে ২০২৪-এর ডিসেম্বরেই লোকসভায় ‘এক দেশ, এক ভোট’ বিল পেশ করা হয়েছে। তার উপরে সবিস্তার আলোচনার জন্য বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতেও পাঠানো হয়েছে। তবে যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন মিললেও এই বিল সংসদে পাশ করানো মোদী সরকারের পক্ষে সহজ হবে না। এর জন্য দু’টি সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করাতে হবে।

যে হেতু সংবিধান সংশোধনী বিল, সে হেতু সংসদের উভয় কক্ষেই দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় দরকার। সংসদের কোনও কক্ষেই বিজেপি বা এনডিএ-র দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা নেই। শুধু সংসদে পাশ হলেও চলবে না। দেশের অর্ধেকের বেশি রাজ্যের বিধানসভাতেও এই বিল পাশ হয়ে আসতে হবে। পুরো পরিস্থিতি মাথায় রেখেই বিজেপি জনমত গঠনে জোর দিচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত। বিশ্লেষকদের মতে, যাঁদের কথায় সমাজ প্রভাবিত হয়, তাঁদের মুখ দিয়ে ‘এক দেশ, এক ভোট’-এর পক্ষে সওয়াল করানো শুরু করতে চায় বিজেপি। যাতে এই বন্দোবস্তের পক্ষে দেশজোড়া বাতাবরণ তৈরি হয়। তাতে লোকসভা বা রাজ্যসভায় বিজেপির আসন বেড়ে যাবে না। কিন্তু যে সব দল এখনও বিল দু’টিকে সমর্থন করা নিয়ে দোলাচলে রয়েছে, জনমতের চাপ সে সব দলকে ‘সমর্থক’ করে তুলতে পারে বলে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন।

রাজ্যে রাজ্যে স্রেফ কমিটি গড়েই যে বিজেপি দায় সারতে চায় না, তার ইঙ্গিত রবিবারই কিছুটা মিলেছে। শনিবার কমিটি গড়ার পর রবিবারই বিজেপি প্রচারের ময়দানে নেমে পড়েছে। সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বনসলকে প্রধান বক্তা হিসাবে রেখে রবিবার দক্ষিণ কলকাতায় এক আলোচনা সভার আয়োজন হয়। হাজরার এক প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত সেই সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল মূলত বিভিন্ন পেশার তরুণদের। প্রাক্‌ সাধারণতন্ত্র দিবসের ভাষণে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও সওয়াল করেছিলেন ‘এক দেশ, এক ভোট’-এর পক্ষে। শনিবার কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানও এক প্রকাশ্য সভা থেকে ‘এক দেশ, এক ভোট’-এর পক্ষে সওয়াল করেছেন।

বাংলার শাসক দল তৃণমূল শুরু থেকেই ‘এক দেশ, এক ভোট’-এর বিপক্ষে। এই বন্দোবস্ত চালু হলে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তৃণমূলের মত। সেই মতের বিপক্ষে এ বার ‘সামাজিক মত’ তৈরি করতে বিজেপি সক্রিয় হচ্ছে। তৃণমূল কি চুপচাপ বসে থাকবে? দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলছেন, ‘‘বাংলার মানুষ বিজেপির কাছ থেকে এখন এ সব কথা শুনতে চাইছেন না। মানুষ আগে জানতে চাইছেন, পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্য টাকা কেন আটকে রাখা হয়েছে।’’ কুণালের কথায়, ‘‘প্রত্যেকটা ভোটের চরিত্র আলাদা হয়। এক দেশ, এক ভোট কখনওই সম্ভব নয়।’’ কিন্তু বিজেপি জনমত গঠনের যে কৌশল গ্রহণ করেছে, তৃণমূল কি তার পাল্টা কৌশল নেবে? কুণাল বলছেন, ‘‘পাল্টা রণকৌশল নেওয়ার কিছু নেই। বিজেপির এ সব কর্মসূচিকে আমরা গুরুত্ব দিই না। সুনীল বনসল পণ্ডশ্রম করছেন। বাংলার মানুষ বিজেপির কাছ থেকে এখন এ সব কথা শুনতে চাইছেন না। লোককে এ সব না বুঝিয়ে আগে কৈফিয়ৎ দিক, কেন বাংলার টাকা আটকে রেখেছে। বিভিন্ন সভা থেকে মানুষকে যা বলার, আমরা অবশ্যই বলব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement