নজরদারি। কতটা জল ছাড়া হচ্ছে, সল্টলেকের জলসম্পদ ভবনে বসে দেখছেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
রীতিমতো নাকানিচোবানি খাইয়ে দিয়ে বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ বাংলাদেশের দিকে কিছুটা সরে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু এর মধ্যেই যে-ব্যাপক বর্ষণ হয়েছে, তাতে বাংলার বহু এলাকার বানভাসি অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বাঁধ থেকে যাতে আর জল ছাড়া না-হয়, সেই জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কড়া ভাষায় ডিভিসি-কে চিঠি পাঠাল রাজ্যের সেচ দফতর।
নিম্নচাপ বাংলাদেশের পথ ধরায় মঙ্গলবার তুমুল বৃষ্টি থেকে রেহাই পেয়েছে কলকাতা এবং লাগোয়া এলাকা। তবে সীমান্ত জেলাগুলিতে এ দিনও বৃষ্টি হয়েছে। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, আজ, বুধবারেও ওই সব জেলা এবং ঝাড়খণ্ডে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চল এবং ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। তার উপরে ডিভিসি জল ছাড়তে থাকলে পরিস্থিতি ঘোরালো হতে পারে। সেই জন্যই উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী বিদেশ থেকে ডিভিসি-কে চিঠি লেখার নির্দেশ দিয়েছেন বলে নবান্নের খবর।
জল ছাড়া নিয়ে ডিভিসি-র সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের টানাপড়েন দীর্ঘদিনের। ডিভিসি আগাম না-জানিয়ে জল ছেড়ে দেওয়ায় রাজ্য বহু বার বিপাকে পড়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ। তিনি এখন রয়েছেন জার্মানির মিউনিখে। সেখান থেকেই তিনি টানা বর্ষণে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির খবর নেন। নবান্নের খবর, ডিভিসি জল ছাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেই তাদের কাছে চিঠি পাঠানোর জন্য সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নির্দেশ দেন মমতা। কারণ, জল না-ছাড়ার জন্য সোমবারেই মৌখিক ভাবে অনুরোধ করা হয়েছিল ডিভিসি-কে। তা সত্ত্বেও তারা জল ছাড়ায় কড়া ভাষায় চিঠি লিখতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
ডিভিসি-কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে যথাসম্ভব কম জলই ছাড়ছেন। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তাঁরা দু’টি জলাধার থেকে ২৪ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছেন। যা খুবই কম। তবে দুর্গাপুর ব্যারাজ ডিভিসি-র নিয়ন্ত্রণে নেই। তাই সেখান থেকে কত জল ছাড়া হয়েছে, তাঁরা জানেন না। এক ডিভিসি-কর্তা জানান, বৃষ্টি কমেছে। তাই জলাধারগুলি ছাপিয়ে যায়নি। এখনও অনেকটাই জল ধরে রাখা যাবে।
রাজ্য সরকারের চিঠির ব্যাপারে ডিভিসি-র কর্তারা অবশ্য বিশেষ মুখ খুলতে চাননি। তাঁদের দাবি, কেন্দ্রীয় জল কমিশনের নির্দেশ অনুসারেই তাঁরা বিভিন্ন জলাধার থেকে জল ছাড়েন। কখন, কত জল ছাড়া হবে, সেটা রাজ্য সরকারকে আগেভাগে জানিয়েও দেওয়া হয়। আপাতত আর জল ছাড়া হবে কি না, সেই প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেয়নি ডিভিসি।
কিন্তু আবহাওয়া দফতর বর্ষণ চলবে বলে জানানোয় আশঙ্কা কমছে না সেচ দফতরের। জল ছাড়া হচ্ছে কি না, জলসম্পদ ভবনে এ দিন তার উপরে নজরদারি চালান সেচমন্ত্রী। এক সেচকর্তা জানান, দামোদর ও সুবর্ণরেখার জলস্তর বেড়েছে। ইঞ্জিনিয়ারদের মোতায়েন করা হয়েছে নানা জায়গায়। ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চলছে। আর নিম্নচাপের উপরে যাঁরা নজর রাখেন, উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণ করে সেই আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, নিম্নচাপ এ দিনও বাংলাদেশ এবং লাগোয়া গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে ছিল। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, ‘‘বুধবার কলকাতার আকাশ মেঘলা থাকবে। দু’-এক পশলা বৃষ্টিও হতে পারে। তবে ভারী বর্ষণ হতে পারে নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদে। জোরালো বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে বীরভূম, বাঁকুড়া, বর্ধমানেও।’’