বেশিরভাগ লোকজনের মুখে নেই মাস্ক। —ফাইল চিত্র।
কোভি়ড বিধি-নিষেধ শিথিল হওয়ার পর থেকেই করোনাকালের প্রয়োজনীয় সচেতনতাও অনেকটাই শিথিল হয়ে গিয়েছে রাজ্য জুড়ে। কোথাও কোথাও কোথাও তা প্রচণ্ড উদ্বেগের চেহারাও নিয়েছে। যেমন, কোচবিহারের রাস উৎসব থেকে শুরু করে বহমপুরের ভৈরব শোভাযাত্রা বা বেলডাঙায় কার্তিক পুজোর সময় মানুষের ভিড় উপচে পড়েছিল রাস্তায়। খুব কম মানুষের মুখেই মাস্ক ছিল। হুগলি, মেদিনীপুর, বর্ধমান, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় লোকাল ট্রেন চালু হওয়ার পরে কোনও কোনও সময় ভালই ভিড় হচ্ছে। সব মিলিয়ে নানা জায়গায় ভিড় দেখে বোঝার উপায় নেই, ওমিক্রন ভারতে পৌঁছে গিয়েছে।
এখানেই উদ্বেগে রয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলছেন, ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা বেশি। কিন্তু অনেক জেলাতেই যেহেতু এখন কোভিড রোগীর সংখ্যা কম, এমনকি, কোভি়ড হাসপাতালগুলিতেও রোগী প্রায় নেই বললেই চলে, তাই সাধারণ মানুষের মন থেকে ভয় অনেকটা কমে গিয়েছে। চিকিৎসকদের সংগঠন আইএমএ-র মুর্শিদাবাদ জেলার সম্পাদক রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘করোনা ভাইরাস যখন প্রথন এসেছিল, তখন যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, এখন তা-ই নিতে হবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ দীর্ঘ কাল লকডাউনে ঘরে বসে অস্থির হয়ে পড়েছেন। কিন্তু তাঁদের বোঝাতে হবে, বিপদ এখনও কাটেনি।’’ রাজ্য কোভিড মনিটরিং কমিটির পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার কো-অর্ডিনেটর সমরেন্দ্রকুমার বসু বলেন, “মানুষের মধ্যে সচেতনতা যেন দিন দিন কমছে। রাস্তাঘাটে বেরোলেই তা বোঝা যায়। প্রায় কারও মাস্ক নেই। প্রশাসনের উচিত ব্যবস্থা নেওয়া।”
এই পরিস্থিতিতে ঝাড়গ্রামে মাস্কবিহীন লোকজনকে দেখলে করোনা পরীক্ষা করানোর কর্মসূচি মাঝে মধ্যেই নেওয়া হচ্ছে। এই জেলায় পুলিশের উদ্যোগে বিভিন্ন রাস্তায় মাস্ক বিহীন বাইক ও গাড়ির চালক ও আরোহীদের আটক করা হচ্ছে। জেলাশাসক জয়সি দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘জেলার লোকপ্রসার প্রকল্পের শিল্পীদের দিয়ে প্রচার হচ্ছে, ‘প্রধান টাস্ক মুখে মাস্ক’। মাস্ক পরার জন্য সচেতনতার কাজ চলছে।’’ জেলা পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘পথে ঘাটে মাস্ক না পরে বেরোলে সচেতন করা হচ্ছে। মাস্কও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বার বার সচেতন করা সত্ত্বেও যাঁরা মাস্ক পরছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করাও হচ্ছে।’’
একই পথে হাঁটছে বাঁকুড়াও। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, “মাস্ক পরা নিয়ে মানুষকে সচেতন করা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, জনসচেতনতা গড়ে তুলতে মাইকে প্রচার করা হচ্ছে। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে মানুষকে বোঝাতে আশাকর্মীদের কাজে লাগানো হয়েছে। এতেও কাজ না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শীতে বিয়েবাড়ি থেকে পিকনিক, নানা অনুষ্ঠানে দূরত্ববিধি, স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা নিয়েও চিন্তায় রাজ্যের নানা জেলা প্রশাসনের কর্তারা। মাস্ক নেই কেন প্রশ্ন করা হলে কেউ সংক্রমণ কমে যাওয়া, কেউ শীতে শ্বাসকষ্টের অজুহাত দিচ্ছেন।
কোচবিহারে অবশ্য দু’রকম ছবিই দেখা যাচ্ছে। কোচবিহার শহরের রাস্তায় মাস্ক পরে বাসিন্দাদের দেখা গিয়েছে। স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করতেও দেখা যাচ্ছে। বহু দোকানে তাপমাত্রা মেপে ঢোকানো হচ্ছে। তবে এই কোচবিহারেই রাসমেলার ভিড়ে মাস্ক ছাড়াও ঘুরতে দেখা যাচ্ছে বাসিন্দাদের। শিলিগুড়ির মতো বাণিজ্যিক শহরে সচেতনতার চিহ্নই নেই বলে দাবি। উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার এই শহরে। সেখানে মাস্ক ছাড়াই ঘুরতে দেখা যাচ্ছে বাসিন্দাদের। প্রশাসনের তরফেও শুধু বলা হয়েছে, ‘‘আমরা প্রচার চালাচ্ছি।’’
জলপাইগুড়ি শহরে মাস্ক পরে বাসিন্দাদের দেখা গেলেও জেলার গ্রামীণ এলাকাতে এবং চা বলয়ে মাস্কের দেখা মেলা ভার। মালদহের পর্যটন এলাকায় কোনওরকম বিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। পুলিশের তরফে মাসখানেক আগে কড়া মনোভাব নেওয়া হলেও এখন নজরদারি ঢিলেঢালা বলে অভিযোগ। দক্ষিণ দিনাজপুরে রোজই পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে, ধরপাকড়ও চলছে। তবু মাস্ক পরতে দেখা যাচ্ছে না বাসিন্দাদের। উত্তর দিনাজপুরের বিধি মানার কোনও বালাই নেই। গ্রামীণ এলাকায় মেলায় ভিড় উপচে পড়ছে। গাদাগাদিতে ভাঙছে দূরত্ব বিধিও।