শংসাপত্র হাতে ভাতা চাইছেন ‘মৃত’ বৃদ্ধা

সরকারি খাতায় ‘মৃত’ এই বৃদ্ধা নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে ব্লক অফিসের দোরে দোরে ঘুরছেন প্রায় ছ’মাস। তিনি যে জীবিত সেই মর্মে পঞ্চায়েত প্রধানের শংসাপত্রও রয়েছে তাঁর হাতে। তবু প্রমাণ করতে পারছেন না, তিনি মরেননি।

Advertisement

গোপাল পাত্র

পটাশপুর শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৫
Share:

গৌরীরানি ধল। নিজস্ব চিত্র

কাদম্বিনী মরে প্রমাণ করেছিল, সে মরেনি।

Advertisement

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কাদম্বিনীর মতোই ‘জীবিত ও মৃতে’র দড়ি টানাটানির মাঝে পড়ে গিয়েছেন পটাশপুরের গৌরীরানি ধল।

সরকারি খাতায় ‘মৃত’ এই বৃদ্ধা নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে ব্লক অফিসের দোরে দোরে ঘুরছেন প্রায় ছ’মাস। তিনি যে জীবিত সেই মর্মে পঞ্চায়েত প্রধানের শংসাপত্রও রয়েছে তাঁর হাতে। তবু প্রমাণ করতে পারছেন না, তিনি মরেননি। ফলে, বন্ধ হয়ে যাওয়া বিধবাভাতাও চালু হচ্ছে না। পেটের দায়ে ৬১ বছর বয়সে তাঁকে পরিচারিকার কাজ করতে হচ্ছে।

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর-১ ব্লকের গোকুলপুর পঞ্চায়েতের হাজিপুর গ্রামে একাই থাকেন গৌরীরানি। ২৫ বছর আগে স্বামী ঈশ্বরচন্দ্র ধলের মৃত্যু হয়েছে। বিয়ে হয়ে গিয়েছে চার মেয়ের। দারিদ্রসীমার নীচে থাকায় ২০১৫-র অক্টোবর থেকে মাসে ৬০০ টাকা করে বিধবাভাতা পাচ্ছিলেন গৌরীরানি। একার পেট। তাতেই টেনেটুনে চলে যেত।

গৌরীরানি জানালেন, ছ’মাস আগে পটাশপুর ডাকঘরে ভাতার টাকা তুলতে গিয়ে জানতে পারেন যে, তাঁর টাকা আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কেন বন্ধ হল জানতে পরে এক প্রতিবেশীর সঙ্গে গোকুলপুর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে যান বৃদ্ধা। তখনই জানতে পারেন, সরকারি খাতায় তিনি ‘মৃত’।

কিন্তু গৌরীরানি যে মারা গিয়েছেন, তা প্রশাসনকে জানাল কে? পঞ্চায়েত অফিস থেকে বৃদ্ধাকে জানানো হয়েছিল, ভাতা-প্রকল্পের উপভোক্তাদের বিষয়ে জানতে যে সমীক্ষা হয়েছিল, তাতেই গৌরীরানিকে ‘মৃত’ দেখানো হয়েছে। পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, এক বছর অন্তর বিধবাভাতার ক্ষেত্রে এই সমীক্ষা হয়। কিন্তু সমীক্ষা কবে হয়েছে, সে সম্পর্কে যেমন জানেন না এলাকাবাসী, তেমনই সমীক্ষার রিপোর্ট কী ভাবে হয়েছে, তা বলতে পারছেন না পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৃদ্ধার এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘অনেক আগে কয়েক জন এসে বাড়ির লোকেদের নাম, সদস্য সংখ্যা জানতে চেয়েছিলেন। কীসের জন্য জানি না। ওই সময় গৌরীরানি বাড়িতে ছিলেন কি না, তা-ও মনে নেই।’’ গৌরীরানির দাবি, তাঁর বাড়িতে কেউ এমন তথ্য জানতে আসেনি।

নিজেকে জীবিত প্রমাণে তাই পরিচারিকার কাজের ফাঁকেই বৃদ্ধা ছুটছেন পঞ্চায়েত এবং ব্লক অফিসে। গোকুলপুর পঞ্চায়েতের প্রধান ইরানি মাইতি বলছেন, ‘‘বৃদ্ধাকে কী কারণে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে, তা নিয়ে আমাদের কাছে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই। কবে, কারা সমীক্ষা করেছিলেন, তা-ও জানা নেই। তবে পঞ্চায়েত থেকে বৃদ্ধার বেঁচে থাকার একটি শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে।’’

সেই শংসাপত্র নিয়ে ব্লক অফিসে গিয়ে বহুবার দরবার করেও লাভ হয়নি। আর বৃদ্ধার জীবন্মৃত দশার কথা জানেনই না বিডিও। পটাশপুর ১-এর বিডিও সুভাষকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘জীবিত বৃদ্ধাকে মৃত ঘোষণার ঘটনা আমার জানা নেই। এলাকায় একই নামের দু’জন থাকায় এই ভুল হয়েছে কি না তা দেখা হচ্ছে। শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হবে।’’

গৌরীরানির আর্জি, ‘‘আমি সত্যি বেঁচে আছি। সরকার যেন ভাতাটা শিগগিরি দেয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement