—প্রতীকী চিত্র।
পাশ দিয়ে কেউ হেঁটে গেলেই এগিয়ে আসছে গুঁতোতে। বিশেষ করে বাচ্চাদের দেখলেই তেড়ে যাচ্ছে। কখনও-সখনও তো অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের রান্নাঘরেও ঢুকে পড়ছে। শুধু তা-ই নয়, এলাকার এক অশীতিপর বৃদ্ধাকে নাকি কামড়ে মেরেও ফেলেছে সম্প্রতি! শূকরের এই দৌরাত্ম্যে কার্যত অতিষ্ঠ বাঁকুড়ার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের লালবাজার এলাকা।
স্থানীয়দের দাবি, লালবাজার অনেক দিন ধরেই শূকরের ‘মুক্তাঞ্চল’। এলাকার কয়েক জন নিজেদের বাড়িতে শূকর পুষেছেন। সকালে তাঁরা শূকরগুলিকে বাইরে ছেড়ে দেন। তার পর থেকে দিনভর চলে তাদের দাপাদাপি! অভিযোগ, রাস্তাঘাটে শূকরের সংখ্যা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, চলাফেরা করা দায় হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শিশুদের তাড়া শূকরের দল। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে স্থানীয় একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। অভিভাবকদের দাবি, শূকরের ভয়ে শিশুদের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পাঠিয়েও নিশ্চিন্তে থাকা যায় না। কারণ কয়েক দিন আগেই এক দল শূকর অঙ্গনওয়াড়ির রান্নাঘরে ঢুকে পড়েছিল।
এলাকাবাসীরা জানাচ্ছেন, এর মধ্যে শূকরের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে বছর চুরাশির করুণা কর্মকারের। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে মৃত্যু হয়েছিল বৃদ্ধার। এই ঘটনার পর থেকেই আতঙ্ক আরও বেড়ে গিয়েছে এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা অলোক দাস বলেন, ‘‘করুণা কর্মকারের মৃত্যুর পর আমরা দিনের বেলাতেও বাড়ির বাইরে পা রাখতে ভয় পাচ্ছি। শিশুদের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পাঠিয়েও নিশ্চিন্তে থাকতে পারছি না। মাঝেমধ্যে খাবারের খোঁজে বাড়িতেও ঢুকে পড়ছে শূকরের দল। এই অবস্থায় পুরসভা পদক্ষেপ না করলে আগামী দিনে এই এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে।’’ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী সন্ধ্যা ধাড়া বলেন, ‘‘আমাদের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কোনও সীমানা পাঁচিল নেই। তাই কেন্দ্রের মাঠে দিনভর অবাধে ঘুরে বেড়ায় শূকরের দল। মাঝেমধ্যে রান্নাঘরে ঢুকে খাবারে মুখ দেয়। সেই খাবার ফেলে দিতে হয়।’’
পরিকাঠামোর অভাবে শূকরের বাড়বাড়ন্ত রুখতে নিজেদের অসহায়তার কথা গোপন করেনি বাঁকুড়া পুরসভাও। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃনমূল কাউন্সিলার অভিজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘শূকরের আতঙ্ক এলাকায় আগে থেকেই ছিল। শূকরের হানায় জখম হয়ে করুণা কর্মকারের মৃত্যু হয়েছে। এতে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। আমরা এর আগে এলাকায় মাইকে প্রচার চালিয়ে শূকরের চাষ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি। শূকর বাজেয়াপ্ত করার মতো পরিকাঠামো পুরসভার না থাকায় সমস্যা আরও বেড়েছে।’’